কমলারাষ্ট্র ও বিবিধ আলোচনা

ফারহান ইশরাক

বিভিন্ন বাহ্য বস্তুর সঙ্গে আলোচনা

সঙ্গমের ধারণা থেকে তোমায় একটু
সরিয়ে নিচ্ছি রাত, 
একটু চুপ করো
প্রসব কালের কত মাত্রা 
কত দাড়িকমা
এমন নয় অন্ধকারে বীজ…
এ বেদনা সর্বমৌসুমি
বৃষ্টি যোগ হলে পরিস্থিতি 
গুরুতর হয়ে পড়ে

universel cardiac hospital

মধ্যরাত, তুমি নও একমাত্র প্রস্তাব
পারি; 
পরার কাপড় খুলে বা না খুলে
যেকোনো সত্যে,
যেকোনো পন্থায়
চন্দ্রালোকিত সাপের ডিম দেখে
যিনি ক্ষমতা বা আতঙ্কের 
অবধারণ থেকে বিরত আছেন
তিনি কবি
ক্যালসিয়ামের এই গোলকায়ন 
তার কাছে সুন্দরের স্পর্ধা বৈ নয়

আমি? পেরেকের মুখে প্রজ্জ্বলনের
সীমিত ধা্রণা!
আগুনভর্তি পাথর
একটু হয়তো জলের নিচে আছি
হাড়ের মজ্জা হয়ে 
একান্ত চিৎকার, ধরুন, এলো উঠে 
বেলা অবেলায়
যেমন আসে নক্ষত্রমেয়াদি 
পতনের গভীর সঙ্কট!

রাতের জন্য শোবার ঘরটায়
ছিটকিনি ব্যবস্থা 
প্রত্যাহার করেছি
আসতে পারো নিদ্রাহীন লাভা
বিপুল-উৎক্ষেপী আর্তনাদ
যে-কেউ, 
শব্দ কিংবা সাহসের
অনুষঙ্গ ধ’রে 
এর জন্য অনুমতি প্রথা
মুলতবি রেখেছি


ফলপ্রসূ আলোচনায় এসো সব্জিগাছ
ফলনের মাত্রা বিষয়ে
প্রশ্ন তুলবো না
পুষ্টিগুণ ঠিক রেখো, এই শুধু কথা
ইকোসিস্টেমে সব বাধা 
প্রত্যাহার করে নেবো।

মুহূর্তের আলোচনা

পাকা চুলের সংকেতবহ বিন্যাস থেকে একটি বার্তা
এই অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হবে, প্রিয় সভাসঞ্চারী
লাল পেঁপে থেকে ঠোঁট খসিয়ে উড়ে যাওয়া কাক
একটি কৌশলগত পূর্বাভাস দিয়ে গেল
এবং কুকুর, টিনের চোঙ্গার মতো মুখে…
এবং আমি প্রধান বক্তা নই, আর ভাষণের বাণীটুকু
বহু শতকের রক্তব্যঞ্জনা থেকে শিরাপথে প্রবাহিত
এবং ধরে নিচ্ছি আপনারা কেউ জানেন না যে, 
এই চত্বরে একটু পরেই এমন এক বজ্রপাত হবে
যা যুগপরিবাহী প্রতিভার মাইক্রোচিপস থেকে
উৎপন্ন হয়ে থাকে


এখন, ধ্বংসের প্রাক্কালে, খেই হারানো যে প্রসঙ্গ নিয়ে 
কথা বলবো, 
তার গায়ের রঙ লালসা এবং প্রিয় অনুজের নাম হিংসা
যদি আপনাদের জিহ্বার অগ্রভাগ দাঁতকে স্পর্শ না করে
এবং যদি কাটা না হয় কোনো তাচ্ছিল্যের টিপ্পনি,
কথা দিচ্ছি, আমার দূরদৃষ্টি জনতার রুদ্ধশ্বাস
প্রস্থানের জন্য প্রেরণা যোগাবে, যখন
মনে রাখতে হবে, এ কোনো পিছুটান নয়
প্রত্যাধাবনের জন্য একটি পপ্রজ্জ্বলিত মন্তাজ

এখানে একটি ‘কিন্তু’র অবকাশ দেখতে পাচ্ছি
ভায়েরা আমার, কোনো অপরিসীম গুপ্ত জ্ঞান থেকে
এই কাব্য বিস্ফোরিত নয়
এর মৌল সোপান একটি চোখ বোঁজা পাথরখণ্ডে
প্রস্তাবিত হয়েছিল
অথচ তা পুঁথি কারখানার পুরুষ্ট স্বত্বাধিকার থেকে
এসেছে, তা নয়
এবং এই যে মঞ্চে বসা চিরপুরুষের দোহাই পেরে
এতসব আস্ফালন হচ্ছে 
প্রথাগমনের অঙ্গীকার থেকে এখানে আসিনি
সভাপতি পদ্ধতি একটি ঐতিহ্য মাত্র, এবং এই প্রতীকে
কখনো কখনো ইস্পাতের ক্রোধ থেকে
কিছু ফুলকি উৎক্ষিপ্ত হয়েছে অতীতে
এবং বলা দরকার, এই কমোডে বসে এখন ঐতিহাসিক
বিষ্ঠাপাত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে


যদিও একটি ধোঁয়ার কুণ্ডলি এবং আনুষঙ্গিক আগুন
বেদিমূলের সকল আক্ষরিকতাকেও গ্রাস করবে,
এই আর্তচিৎকার এক বাক্যে বিস্ফোরণযোগ্য নয়
এবং এর বয়স সভ্যতার চোয়ালের মতো অমসৃণ 
এবং তা রেখার ইঙ্গিতে গণনাযোগ্য নয়
কী বলা হবে, তার আগে কেন বলা হবে, 
এমন একটি সোরগোল শুনেত পাচ্ছি
চলুন, পা চালাই একটি প্রত্যাঘাত কেন্দ্রের দিকে
যা এখনো কাল্পনিক; সেখানে আমাদের চেতনার 
কিছু তেজস্ক্রিয়া ঘেউ ঘেউ কেবলই ডাকছে!
অথচ শত্রুরা একটু পরেই বোতাম টিপবে!


কিসের এত মুখরোচকতা, কেন এই ভাষণসন্ধ্যা?
এ-ও যদি হতো যে, আলোচনার প্রধান বিষয় 
তেজপাতা, যে তার প্রধান স্বভাব ধরে রাখে 
উৎস থেকে উৎপাটন…, হে প্রতিটি নিঃশব্দ বারুদ
ধরুন, একটি পিতলের মহাপাতিল ধরে আছে
মরণ ভোজের যাবতীয় নীল ক্ষীর!
তাতে লবণের অংশ আত্মপ্রহসনকামী নয়
লোহার মাত্রা অপ-ক্ষমতার বীর্যপাত সনাক্ত করবে
এখন এই অমোঘ সর্বনাশের দূরনিয়ন্তিত অভিঘাত
কে পারবে প্রত্যাঘাতে সরিয়ে দিতে?


আত্মম্ভরী হে মুগ্ধ সভানির্দেশক, বলুন
এখন কি অনুগামী হবো রূপকথার সেই অর্ধেশ্বরীর
যার পোশাকের পেছনভাগ লেজের মতো ঝোলানো 
এবং পাতলা; আর, প্রসঙ্গ বদলের আগেই মনে হবে
তিনি উড়ে যাবেন নিরাপদ ক্রোধের অভিসারে
কলজেভেদী স্প্লিন্টারের কোরাস ধরে
পাবো কিনা তাঁর ডানা, এই কালবেলা, বলুন!

কমলা কিনতে গিয়ে যা যা ঘটলো

দেখা গেল, এই ফল এমন, মিষ্টি প্রদেশগুলো
স্বায়ত্বশাসিত নয়, যদিও সংহত
প্রতিটির চারপাশে পৃথক পর্দা 
এবং কারো কোনো নিজস্ব নাম নেই
কেন্দ্রের পরিচয়ে প্রত্যেকে রসাত্মক
বিন্যাসে পরস্পর গোল হয়ে আছে
গোলত্বও কি এক প্রকার গোলামির
ইঙ্গিত হতে পারে?


সার্বভৌমতা বলতে চামড়ার সুগন্ধি প্রলেপ, 
প্রতিবেশি দেশ বলতে একমাত্র মাছি, 
এমন হলে কথাই ছিল না
বোঝা গেল, এ নিয়েও নানা ভণ্ডামি
উদাস ভঙ্গিতে যারা ওজন করা ফল নিয়ে
ঘরে ফিলছিল, তাদের পাঞ্জাবিও শাদা
এবং এটাও বিভান্তিকর যে, কেউ কেউ 
ভাবেন, এ কেবল গাঠনের চারুতায়
মানুষের নিরীহ লালসা


ঢিলে জামা দেখে প্রশান্তির কথা মনে আসে
এ-ও মনে রাখা দরকার হতে পারে যে, 
সুতার বুননি হয়তো কোনো কারচুপি
লুকিয়ে রেখেছে!
প্রাদেশিক মুগ্ধতা যেন মধ্যবিন্দুর টান থেকে
ছিটকে না পড়ে!
ভক্ষণের বেলা কমলারাষ্ট্র চুরমার হতে পারে!

অলংকরণ: তাহমিদুল আজরফ

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে