বিএনপির কারাবন্দি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধার’-এর দাবিতে প্যাকেজ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। এই কর্মসূচিতে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে দলটি।
এসব তথ্য জানিয়েছেন, বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তারা জানান, খুব শিগগিরই প্রথম ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ক্রমাগত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিএনপির শীর্ষ নেতারা কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে একমত হন। কর্মসূচির একটি প্যাকেজ শিডিউলও ঠিক করেন তারা। সেখানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, কালো পতাকা প্রদর্শন, সমাবেশ ও গণঅনশনের মতো ‘শান্তিপূর্ণ’ ও ‘নির্ঝঞ্ঝাট’ কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়।
কর্মসূচির প্রথম ধাপের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় ১ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত।
কিন্তু আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিএনপির নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথ গ্রহণ করায় এবং সংসদে যোগ দেওয়ায় প্রথম ধাপের কর্মসূচি মে মাসের প্রথম দিকে শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বিএনপি নেতারা।
তবে খুব শিগগিরই এ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা— এমনটিই প্রত্যাশা দলটির শীর্ষ নেতাদের।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই কর্মসূচির সঙ্গে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সম্পৃক্ত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি।
সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে জোটগতভাবে ও জোটের শরিক দলগুলো নিজ নিজ উদ্যোগে কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত হয়েছে জোট শরিকরা।
কর্মসূচির ধরণ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান জানান, পরবর্তী বৈঠকে কর্মসূচির ধরন ঠিক করা হবে। তবে বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, খুব শিগগিরই মানববন্ধন, বিক্ষোভ, কালোপতাকা প্রদর্শন, প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে ২০দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে সক্রিয় হবে বিএনপি।
জোট শরিকদের আগ্রহে ভাটা
অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি যে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সে বিষয়ে ৩০ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো। কিন্তু বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্য শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেওয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে জোট শরিকদের মধ্যে সেই আগ্রহে এখন ভাটা পড়েছে।
গত ২৯ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন বিএনপির চার সংসদ সদস্য। শপথ নিয়েই তারা যোগ দেন সংসদ অধিবেশনে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পূর্বঘোষিত ৩০ এপ্রিলের ‘গণজমায়েত’ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয় কমিটি, যার প্রধান গণফোরামের সহ-সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক।
প্যাকেজ কর্মসূচিতে থাকছে না ‘হরতাল’-‘অবরোধ’
এদিকে, তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে ক্রমাগত চাপ সত্ত্বেও হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে সায় নেই বিএনপির। দলটির নীতিনির্ধারকদের যুক্তি— এই মুহূর্তে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে নেতাকর্মীদের ওপর আরেক দফা খড়গ নেমে আসবে। তার চেয়ে বরং ‘শান্তিপূর্ণ’ ও ‘নির্ঝঞ্ঝাট’ কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আপাতত চাঙ্গা ভাব ফিরিয়ে আনতে হবে। দল সংগঠিত হওয়ার পর কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবা যাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি দেব। প্রথম পর্যায়ে গণসংযোগ, মানববন্ধন, অনশন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে।’