বাংলাদেশের দাবি মেনে অবশেষে ভারতে সম্প্রচারিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল। উভয় দেশের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে এক বৈঠকে মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে ভারতের নয়াদিল্লিতে দেশটির কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্রী অমিত খের– এর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গহর রিজভী এবং ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী— ভারতের ডিডি ফ্রি ডিশ–এর মাধ্যমে বাংলাদেশের টিভি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইরকমভাবে সৌজন্য দেখিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ঘোষণা করেছে যে, দূরদর্শন চ্যানেলও খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে ডিটিএইচ পরিসেবায় যুক্ত করা হবে।
অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং বাংলাদেশ বেতারের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতায় এক চুক্তিও দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, এ বছরের জুন থেকে বিভিন্ন সম্প্রচার ব্যবস্থা কার্যকর হবে। তবে বাংলাদেশের কোনো বেসরকারি টিভি চ্যানেল আপাতত এ সুবিধা পাচ্ছে না। কেবল সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এই ডিডি ফ্রি ডিশের সুবিধা নিতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ভারতে বিদেশি টিভি চ্যানেল দেখানোর ক্ষেত্রে ট্রাই (টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া) অনুমতি সংক্রান্ত বাধা নেই। তারপরও দেশটির শতশত এমএসও (মাল্টিপল সিস্টেম অপারেটর) সংস্থাগুলোর উচ্চহারে মাসিক ফি’র জেরে দেশটিতে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। এ চুক্তির জেরে এমএসও ফি এড়িয়ে ভারতে সম্প্রচারিত হতে পারবে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল।
এদিন ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে শক্তিশালী কমিউনিটি রেডিও নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশন (আইআইএমসি) সেন্টারে এই ক্ষেত্রের সঙ্গ যুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা যেন প্রশিক্ষণ নিতে পারেন এবং মতবিনিময় করতে পারেন সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
পাশাপাশি এদিনের বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীর ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়। দুইদেশের প্রধানমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, দুদেশের যৌথ সহযোগিতায় এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে। এই চলচ্চিত্র পরিচালনা করবেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শ্রী শ্যাম বেনেগাল এবং চলচ্চিত্র স্ক্রিপ্ট রাইটারের দায়িত্বে রয়েছেন শ্রী অতুল তিওয়ারি। তারা দুইজনই এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ের জন্য গবেষণার কাজে শ্রী অতুল তিওয়াড়ি বাংলাদেশে যাবেন। তাকে সহযোগিতা করবেন চলচ্চিত্র পরিচালক পিপলু খান।
যৌথ সহযোগিতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের তথ্যচিত্র নির্মাণের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, তথ্যচিত্রের পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন বাংলাদেশের একজন। তাকে সহযোগিতার জন্য ভারতের একজন সহযোগী পরিচালক থাকবেন।