রবীন্দ্রসাহিত্যে গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের তিন গুণিজন পেলেন বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ‘রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১৯’। তাৎপর্যবহ এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার দেয়া হয় শিল্পী ইকবাল আহমেদকে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ৮ মে বুধবার দুপুরে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১৯ প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
একক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম। এ সময় পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিল্পীর হাতে পুষ্পস্তবক, সনদ, সম্মাননা স্মারক ও পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার মূলে ছিল আনন্দের ধারণা, যে শিক্ষা-কাঠামোয় কঠিন শাসনের পরিবর্তে ছিল উদারতার আবহ। রবীন্দ্রনাথ দেশপ্রেমে স্নাত ছিলেন তবে কোনভাবেই সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। তার মানবভাবনার মূলে ছিল অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব নাগরিকের সুদৃঢ় অবস্থান।’
অনুষ্ঠানে ‘রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ : শিক্ষা ও স্বদেশ ভাবনা’ শীর্ষক একক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ও স্বদেশভাবনা অনন্যতার দাবি রাখে। তার শিক্ষাভাবনা ছিল প্রায়োগিক ও বৈজ্ঞানিক। তিনি পূর্ববাংলায় জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন কিন্তু একই সঙ্গে পালন করেছেন মানবিক আসমানদারির দায়িত্ব। বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জীবন মানোন্নয়নে তার ভাবনার অন্ত ছিল না। তিনি ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে তার স্বদেশ ভূমিকে লুণ্ঠিত হতে দেখেছেন। এই লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে আত্মশক্তি জাগরণের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ স্বদেশকে নতুন করে নির্মাণের ব্রত নিয়ে আমৃত্যু সাধনা করে গেছেন।’
একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলা একাডেমি গত একদশক ধরে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। যা রবীন্দ্র গবেষণা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রসারে এদেশের রবীন্দ্র চর্চার প্রণোদনায় বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলা একাডেমি পাঁচ খণ্ডে রবীন্দ্রজীবন প্রকাশের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে তিনটি খণ্ড প্রকাশ পেয়েছে। আমরা আশা করি আহমদ রফিক প্রণীত রবীন্দ্রজীবনের বাকি দুটো খণ্ডও অচিরেই প্রকাশ পাবে।
অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজনেরা বলেন, বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্তি জীবনের বিশেষ অর্জন। রবীন্দ্র গবেষণা ও চর্চায় আরও নিবিড়ভাবে নিবিষ্ট হওয়ার দায় এ পুরস্কার আরও বেশি করে তৈরি করবে।
সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন- শিল্পী শামা রহমান এবং রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত ইকবাল আহমেদ। রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী রূপা চক্রবর্তী।