সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় আজ থেকে প্রায় পাঁচশত বছর আগে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুদানে নির্মিত শাহ ইমাম (র.)-এর বাড়ি ও মসজিদটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অযত্ন, অবহেলা, আর সংস্কারের অভাবে পুরনো ইমাম বাড়ির একটি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু গম্বুজের মতো ছোট একটি ঘর এখনো ঐতিহাসিক চিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকলেও তা একটি গাছের নিচে ঢাকা পড়েছে।
জানা যায়, শাহ ইমাম (র.)-এর জন্মস্থান ইয়ামেনে। তিনি ১৫ শতকের দিকে বাংলাদেশে আসার পর চলন বিল এলাকার বারুহাস গ্রামে অবস্থান নেন। সেই সময়ে এই এলাকার অধিবাসীরা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তিনি তাদের মধ্য ইসলামের বাণী ও আদর্শ প্রচার করেন। ফলে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি চলনবিলের উত্তর ও মধ্যম স্থানটিকে ইসলাম প্রচারের স্থান হিসেবে বেছে নেন।
এদিকে দিল্লির ক্ষমতায় আসীন হন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর। সিংহাসন আরোহনের পর সম্রাটের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেন। সেই সময়ে চলনবিল এলাকায় ব্যাসপরগনা পরিদর্শনে আসেন।
তিনি জানতে পারেন, এখানে বারুহাস গ্রামে অবস্থান করছেন ইয়েমেন থেকে আসা এক ধর্ম প্রচারক। পানিতে ঘেরা এক উন্মুক্ত ভিটায় শাহ ইমাম (র.)-কে লক্ষ্য করে সম্রাটের জলযান সেখানে ভেড়ানো হয়।
ইসলাম প্রচারককে সম্রাট সাদরে অর্ভ্যথনা জানান। সম্রাট জাহাঙ্গীর এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের অগ্রগতিতে ইমাম সাহেবের ভূমিকায় অবগত হয়ে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
শাহ ইমাম (র.)-এর ইবাদতে জন্য কয়েকটি পাকা ঘর নির্মাণ ও পুকুর খনন করারও ব্যবস্থা নেন। এছাড়া ইসলাম প্রচারের জন্য ৮০ একর জায়গা করমুক্ত হিসেবে দান করেন।
সম্রাট জাঙ্গাগীরের কর্মকর্তাদের তত্ববধায়নে মসজিদ নির্মাণের পর এখানেই শাহ ইমাম (র.)-এর ইসলাম প্রচারের কেন্দ্রস্থল ছিল। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি এখানেই বসবাস করছেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদের পূর্ব-উত্তর পাশে এ পূণ্যাত্মার মাজার সহ তাঁর আরও কয়েজন শিষ্যের মাজার রয়েছে।
বর্তমান শাহ ইমাম (র.) ইমামবাড়ি স্বেচ্ছায় দেখভাল করছেন বারুহাস গ্রামের এস. এম. গাজী হাসান ফরিদ।
তিনি জানান, ৩০ শতক জায়গার পর পীর সাহেবের মাজার রয়েছে। সেখানে ছোট্ট একটি মাজার ছাড়া সবগুলো স্থাপনাই ধ্বংস হয়েছে গেছে। তাছাড়া মাজারের সামনে সাড়ে আটবিঘা আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। সেই পুকুরটি ওই এলাকার কিছু লোক দখল করে নিয়েছে।
- হাওর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প
- মায়া সমুদ্রসৈকত ২০২১ সাল পর্যন্ত বন্ধ
- ‘খালেদা জিয়া ছাড়া পেলে জনস্রোতে ভেসে যাবে ক্ষমতাসীনরা’
ইমামবাড়িটির জায়গাগুলো উদ্ধার ও স্থাপনাগুলো পুর্ননির্মাণ করে শাহ ইমাম (র.)-এর স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি অনুদানের ৮০ একর জায়গার যেটুকু দখল হয়েছে তা উদ্ধারেরও দাবি জানিয়েছেন সচেতন গ্রামবাসী।