চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ জুন। শেষ সময়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের উৎসবে মেতে উঠেছেন তিনি।
ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের স্বজন ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বছরখানেক সময় ধরে পর্যায়ক্রমে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যার আসামিদের আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দিয়ে ‘পুরস্কৃত’ করেছেন তিনি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপাচার্য।
দিয়াজের পরিবার ও তাঁর অনুসারী ছাত্রলীগকর্মীরা শুরু থেকেই এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করে আসছিল। লাশ উদ্ধারের তিন দিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যালের চিকিৎসকদের দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হয়। এর ভিত্তিতে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলাও করে পুলিশ।
তবে এ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পরদিন দিয়াজের মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু, সহসম্পাদক আব্দুল মালেকসহ সংগঠনটির ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
পরে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দেওয়া প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা দিয়াজের শরীরে হত্যার আলামত পাওয়ার কথা জানান।
এ মামলায় সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের এ শিক্ষকের স্ত্রী আয়েশা আক্তার সহকারী কিউরেটর হিসেবে চাকরি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে।
আরেক আসামি আব্দুল মালেকের সহোদর আলিমুল্লাহ নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় যে ভাড়া বাসা থেকে দিয়াজের মরদেহ উদ্ধার করা হয় সে বাসার দারোয়ান মিজানুর রহমান মিন্টুও চাকরি পেয়েছেন গ্রন্থাগারে।
এ ছাড়া গত বছর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সাঈদা আক্তার শাহনাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দিয়াজের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত করার অভিযোগ এনেছিল তাঁর পরিবার।
আসামিদের আত্মীয়স্বজনের ঢালাওভাবে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষকদের একাংশ ও দিয়াজের পরিবারের মধ্যে। চাকরি দেওয়ার মাধ্যমে উপাচার্য দিয়াজ হত্যায় অভিযুক্তদের পুরস্কৃত করেছেন বলে মন্তব্য করেছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
দিয়াজের পরিবারের অভিযোগ, ভাড়া বাসার কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান মিন্টুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া আরেক আসামি আনোয়ার হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর স্ত্রীকে চাকরি দেন উপাচার্য।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি আব্দুল মালেকের ছাত্রত্ব শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারণেই এখনো তিনি ক্যাম্পাসে থাকতে পারছেন। উপাচার্য আব্দুল মালেককেই চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দিয়াজের পরিবার প্রতিবাদ করায় তাঁর ভাই আলিমুল্লাহকে নিম্নমান সহকারী হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
দিয়াজের বড় বোন জুবাইদা সরওয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, ‘দিয়াজের হত্যাকারীদের আড়াল করতে উপাচার্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিয়াজ হত্যাকারীদের পুরস্কার হিসেবে তিনি চাকরি দিচ্ছেন। এ ধরনের কাজ কখনো মেনে নেওয়া যায় না।’
উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দিয়াজ ইরফানের দুই মামা ও মা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন। কিন্তু দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিদের স্বজনদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। মেধাবী ছাত্র দিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।