বিজিএমইএ ভবন ভাঙায় কালক্ষেপণ

স্টাফ রিপোর্টার

বিজিএমইএ

হাতিরঝিলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর অবৈধ ভবন টিকিয়ে রাখার আইনি আর কোনো পথ বাকি নেই। তবে ভবনটি কীভাবে ভাঙা হবে, সেই সিদ্ধান্তে ঝুলে আছে আদালতের রায় বাস্তবায়ন। ভবন ভাঙতে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল আদালত।

সেই সময় পার হওয়ার চার দিন পর ১৬ এপ্রিল ভবনটি সিলগালা করে রাজউক। এরপর শুরু হয় দরপত্র আহ্বান। ভবনটি ভাঙতে গণমাধ্যমে গত ১৭ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে শর্ত বেধে দেয়া হয় তিন মাসের মধ্যে ভবনটি অপসারণ করতে হবে।

রাজউকের দক্ষিণ ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞপ্তির পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঁচটি দরপত্র জমা পরে। দরপত্র জমা দেয় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স, ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ, পি অ্যান্ড এস এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ এবং সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়। তারা ভবন ভাঙতে এক কোটি ৭০ লাখ টাকার দর জমা দেয়।

তবে দুই সপ্তাহ পরেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি রাজউক। যদিও এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছে তারা। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত এখনও সংস্থাটির চেয়ারম্যান অনুমোদন করেননি। কবে নাগাদ বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অর্পণ করা হবে বা কোন প্রতিক্রিয়ায় ভবনটি ভাঙা হবে, তা রাজউক চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে র‌্যাংগস ভবন যেভাবে ভাঙা হয়েছিল, সেভাবেই বিজিএমই ভবন অপসারণ হবে কি না। ওই ভবনটি ভাঙতে গিয়ে সে সময় ১১ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। তাই এই প্রক্রিয়ায় বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে কি না, এ নিয়ে আবার ভাবনা-চিন্তা করতে হচ্ছে।

তবে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙতে গেলে এর পেছনে খরচ হতে পারে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এত টাকা খরচ করা যুক্তিযুক্ত হবে কি না, এটা নিয়েও পর্যালোচনা চলছে।

যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি পাবে ভবন ভাঙার জন্য আলাদা কোনো অর্থ তারা পাবে না। দুটি বেসমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করে তারা তাদের খরচ ও লাভ উঠিয়ে নেবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে এবং উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয় বিজিএমইএ ভবন। ২০০৬ সালে সেই নির্মাণকাজ শেষ হয়।

জলাশয়ের ওপর আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা এই ভবনকে হাতিরঝিলের প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাইকোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে। সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিলেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। সবশেষ আদালতের দেওয়া সাত মাস সময়সীমা গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়।

এরপর ১৫ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনের মালামাল সরিয়ে নিতে এক দিন সময় বেঁধে দেয় রাজউক। পরে সময় বাড়ানো হয় আরও এক দিন। ভবনে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল সরিয়ে নিলে বিজিএমএইএ ভবন বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে আদালতে অভিযোগ আনেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি জানান, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে এবং ভবন ভাঙার খরচের বিষয়ে আদালতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে। তিনি বলেন, ‘তারা যদি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে বা তারা যদি এটাকে দেরি করতে চায় তাহলে এটা সঠিক হবে না। আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে ভবন থেকে বিজিএমইএ চলে গেলে এটাকে রাজউক ভাঙবে বা বিজিএমইএ ভাঙবে। রাজউক ভাঙলে বিজিএমইএর থেকে টাকা আদায় করে নেবে। খরচটার ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট বলা আছে।’

আদালতে নির্দেশ অনুসারে দ্রুত ভবনটি ভাঙা না হলে তা আদালত অবমাননার সামিল হবে এবং আদালত অবমাননার দায়ে আদালতে অভিযোগের প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানান জনস্বার্থে সবচেয়ে বেশি মামলাকারী এই আইনজীবী। বলেন, ‘এত কিছু সুনির্দিষ্ট বলার পরেও যদি তারা দেরি করে তাহলে আদালত অবমাননা দায়ে তাদের আদালতের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা অপেক্ষা করছি। দ্রুত যদি রাজউকের পক্ষ থেকে এটার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে আমরা আদালত অবমাননার অভিযোগ আনব।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে