ছাত্রলীগের মেয়েদের উপর হামলার ঘটনায় ফেসবুকে নিন্দার ঝড়

ক্যাম্পাস ডেস্ক

ছাত্রলীগের মেয়েদের উপর হামলা
ছাত্রলীগের মেয়েদের উপর হামলা। ছবি : সংগৃহিত

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান না পাওয়া (পদবঞ্চিত) নেতাদের উপর হামলার সময় বাদ যায়নি নারী নেত্রীরাও। কয়েকজন নেত্রীকে চেয়ার দিয়ে পেটানো হয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

এমন হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।  ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নারী নেত্রীসহ একাধিক নেতারা এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্বববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের চালানো ওই হামলায় মারাত্মক আহত হন ছাত্রলীগ নেত্রী বি এম লিপি আক্তার, শ্রাবণী দিশা, শ্রাবণী শায়লা এবং তিলোত্তমা শিকদার। তাদের মধ্যে শ্রাবণী দিশার ভ্রু’র নিচে অন্তত ১৮টি সেলাই দিতে হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রোকেয়া হলের সাবেক সভাপতি শারমিন সুলতানা লিলি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন: ‘‘তাজ্জব হয়ে গেলাম! লজ্জা জানানো ছাড়া অন্য কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি নাহ।’’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও শামসুন নাহার হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফরিন নুসরাত ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: ‘‘মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের বোনদের উপর হামলা! রাজনীতি আর রাজনীতি থাকলো না। সব মেয়েদের উচিত হবে ভিক্টিম এই মেয়েগুলোর পাশে থাকা। নিজে পদ পেয়েছো বলে মুখে কুলুপ এটে বসে থাকলে এই মাইর তোমার উপর এসেও পড়বে। তীব্র নিন্দা জানাই।’’

তার আরেকটি স্ট্যাটাসে বলেছেন: ‘‘মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের উপর হামলার বিচার চাই। আপার ছাত্রলীগ বলে বলে আর তাদের অপরাধ যেন প্রশ্রয় না পায়। সব কি মগের মুল্লুক নাকি? শেখ হাসিনারে সুযোগ পাইলে কেউ বেঁচতে বাদ দেয় না। এইভাবে মারার অধিকার কে তাদের দিয়েছে?’’

কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ বাপ্পি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন: ‘‘ছাত্রলীগের বোনদের উপর হামলা করে রক্তাক্ত করা হলো! এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর দেখি নাই! পদও দিবেন না আবার দাবীও করতে দিবেন না এ কেমন কথা? ফেরিওয়ালা ভাই আপনার মানবতা কোথায় আজ?’’

সৈকত ভৌমিক নামের একজন ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘‘যদি কাউকে অভিনন্দন জানানোর অধিকার সবার থাকে তবে কারো বিপক্ষে প্রতিবাদ জানানোর অধিকারও সবারই আছে। কিন্তু প্রতিবাদ করার কারণে হামলা মেনে নেওয়া যায় না। তাও আবার মধুর ক্যান্টিনের মতন ঐতিহ্যবাহী স্থানে। রাজনীতিতে একটা কমিটি মানেই শেষ কিছু নয়। পদবঞ্চিতদের ক্ষোভটাও স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের প্রতিবাদকে দমিয়ে দিয়ে হামলা করাটা ন্যাক্কার জনক।’’

এ বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুসরাত জাহান শিমু লিখেছেন: ‘‘রাজপথের সহযোদ্ধাদের রক্তে রঞ্জিত করে কোন মুখে নিজেকে এরা আপার ছাত্রলীগ দাবী করে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য নামদারী আপার ছাত্রলীগকে নিন্দা জানাচ্ছি। নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে। আমরা কি এই ছাত্রলীগ চেয়েছিলাম। আপার কাছে বিচাই চাই!’’

সোমবার সন্ধ্যা পৌনে আটটায় কমিটিতে পদবঞ্চিতরা মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন-রব্বানীর অনুসারীরা তাদের ব্যানার কেড়ে নেয়।

এ সময় দু পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছুড়াছুড়ি এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে রোকেয়া হলের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক বি এম লিপি আক্তার, রোকেয়া হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সম্পাদাক তিলোত্তমা শিকদার, কুয়েত মত্রী হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা এবং ডাকসুর সদস্য তানভীর শাকিলসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।

গত বছরের ১১-১২ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রলীগের ২৯তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন। সে সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করার কথা থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন ইস্যুর কারণে প্রায় আড়াই মাস পর (৩১ জুলাই) রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এরপর দফায় দফায় নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার তাগিদ দেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে