হানিফের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করল ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা

ডেস্ক রিপোর্ট

ছাত্রলীগ
ছবি - সংগৃহিত

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সৃষ্ট পরিস্থিতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন পদবঞ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ অংশের নেতা-কর্মীরা।

মধুর ক্যানটিনে সেদিন পদবঞ্চিতপক্ষের নারী নেত্রীসহ কয়েকজনের ওপর ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁরা৷

বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

গত সোমবার মধুর ক্যানটিনে নারী নেত্রীদের ওপর হামলা ও শারীরিক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সোমবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাঁদের ওপর হামলা হয়।

মধুর ক্যানটিনের সোমবারের ঘটনাকে গতকাল মঙ্গলবার ‘ছোট সাধারণ ঘটনা’ হিসেবে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ডাকসুর সদস্য (ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক) নিপু ইসলাম তন্বী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই প্রশ্ন রাখতে চাই, মধুর ক্যানটিনের ঘটনাটি কোন পর্যায়ে গেলে তাঁদের মনে হতো এটি একটি বিশাল আকারের ঘটনা? আমাদের আর কতটুকু লাঞ্ছিত করলে তাঁদের মনে হতো ছাত্রলীগের নারীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে? প্রশ্ন ওঠে, আমরা মারা যাওয়ার পরে কি তাহলে ঘটনাটির সত্যতা প্রকাশ পেত?’

তন্বী বলেন, ‘মধুর ক্যানটিনের মতো জায়গায় যখন ছাত্রলীগের কিছু ছোট ও বড় ভাইয়ের হাতে আমরা নির্যাতিত হই, সত্যিকার অর্থেই এরপরে কোনো বাবা, মা, ভাই কিংবা বোন ছাত্রলীগ করার জন্য তাঁদের ঘরের সন্তানকে পাঠাবেন না। নারী নেতৃত্বের ওপর আর কত আঘাত এলে টনক নড়বে? কবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে আমরা বিবৃতি পাব যে ছাত্রলীগের নারী নেতৃত্বের ওপর হামলা হয়েছে?’

মধুর ক্যানটিনের ঘটনায় ছাত্রলীগের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সম্পর্কে তন্বী বলেন, ‘ওই তদন্ত কমিটি আমরা যারা ভুক্তভোগী, তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় আসেনি। তাহলে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে যে তদন্ত কমিটি করা হলো, সেটি কি আমাদের সঙ্গে শুধুই প্রহসন করা হলো না? তদন্ত কমিটিকে বেঁধে দেওয়া সময় আজই শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে কমিটি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।’

নবগঠিত কমিটি ছাত্রলীগের গৌরব-ঐতিহ্যের সঙ্গে বেমানান

নতুন কমিটি ছাত্রলীগের গৌরব-ঐতিহ্যের সঙ্গে বেমানান—মন্তব্য করে রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক লিপি আক্তার (ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক) বলেন, ‘নতুন কমিটির ৫৯ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে ২২ জন এবারই প্রথম পদ পেয়েছেন। আমরা মনে করি, বিগত দিনে দু-একটা পোস্ট পেরিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে আসা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বড় পদ পাইনি বা বাদ পড়েছি কিংবা আমাদের সঙ্গে পদ–প্রহসন করা হয়েছে বলে নয়, যাদের পদ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে আছে রাজাকারের সন্তান, মাদকসেবী, বিভিন্ন মামলার আসামি, বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িতরা।’

মধুর ক্যানটিনের সেই ঘটনায় পদবঞ্চিতদের পক্ষ থেকে গতকাল ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘বিতর্কিত’ ও ‘নিষ্ক্রিয়’দের কমিটি থেকে বাদ না দেওয়া হলে গণপদত্যাগ ও অনশনের ঘোষণা দেন তাঁরা।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে ছাত্রলীগের আগের কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফ বাবু, দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার শাহজাদা, কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর, ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে