আমদানি-রফতানির মাধ্যমে সংঘটিত রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জোরদারে দেশের সকল নৌবন্দর,বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরে স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষে ২০২০ সালের মধ্যে এনবিআর একশ’ স্ক্যানার কিনবে,যা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বন্দরে বসানো হবে।
রাজস্ব প্রশাসন মনে করছে,সব বন্দরে স্ক্যানার বসানো হলে রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধের পাশাপাশি কন্টেইনারে কোনো বিস্ফোরক,অস্ত্র বা নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টিকারী কোনো পণ্য আছে কি-না,তা যেমন পুরোটা যাচাই করা সম্ভব হবে। তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ কোন পণ্য দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি চোরাচালানও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের কাস্টমস্ মর্ডানাইজেশন এন্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম সচিব মো. গিয়াস কামাল বলেন,‘রাজস্ব ঝুঁকি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রতিরোধে আমরা দেশের সকল নৌ,স্থল ও বিমানবন্দরে স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ লক্ষে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একশ’ স্ক্যানার কেনা হবে, যা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বন্দরে বসানো হবে।’
তিনি বলেন,প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পণ্য চালানবাহী কন্টেইনার পরীক্ষার জন্য ৭টি স্ক্যানার কেনা হবে। বন্দরের যেসব গেটে এখন স্ক্যানার নেই,সেসব গেটে এগুলো বসানো হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেটের মধ্যে বর্তমানে ৫টিতে এখন স্ক্যানার রয়েছে।
স্ক্যানার হলো এমন একটি যন্ত্র,যার ভেতর দিয়ে কোনো কন্টেইনার বা পণ্যের ব্যাগ প্রবেশ করালে তার ভেতরে কোন ধরনের পণ্য রয়েছে তা কম্পিউটারে দেখা যায়। বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্য স্ক্যানিং করে খালাস করা হলে কোনো আমদানিকারক এক পণ্য এনে অন্য পণ্য ঘোষণা দিয়ে বিদেশে অর্থপাচার করতে পারবেন না। আবার বেশি দামের পণ্য এনে কম দামি পণ্য হিসেবে বা উচ্চ শুল্ককরের পণ্য আমদানি করে বিনা শুল্ক বা কম শুল্কের পণ্য হিসেবে ছাড় করাতে পারবেন না।
গিয়াস কামাল জানান, পণ্য স্ক্যানিং ভেদে স্ক্যানার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন পণ্যবাহী কন্টেইনার পরীক্ষার জন্য ফাস্ট স্ক্যানার,গাড়ি স্ক্যানিংয়ের জন্য ভেহিক্যাল স্ক্যানার,যাত্রী স্ক্যানিংয়ের জন্য হিউম্যান বডি স্ক্যানার, যাত্রীর লাগেজ স্ক্যানিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী এক এক বন্দরে এক এক রকম স্ক্যানার বসাতে হবে।
উল্লেখ্য,অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমদানি-রফতানির শতভাগ পন্য স্ক্যানিং করার জন্য এনবিআরকে দেশের সব বন্দরে স্ক্যানার বসানোর নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে একশ’টি স্ক্যানার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী এক সভায় এনবিআরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বলেছিলেন,কেবল চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানার বসালে হবে না। তখন অপরাধীরা চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি না করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি করবে। তাই সব বন্দরেই স্ক্যানার বসাতে হবে।
গিয়াস কামাল বলেন,যেসব পণ্য রফতানির বিপরীতে সরকার থেকে নগদ সহায়তা পাওয়া যায়,অনেক রফতানিকারক ওই সব পণ্য রফতানি না করে কন্টেইনারের ভেতর অন্য পণ্য পাঠান। কিংবা কেউ কেউ উচ্চ শুল্ক মূল্যের পণ্য আমদানি করে কম শুল্ক মূল্যের পণ্যের ঘোষণা দেন। স্ক্যানার বসালে এসব অপরাধ কমবে। যার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে।
তিনি জানান,এছাড়া জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন পণ্য বা বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারবে না। পাশাপাশি যাত্রী কিংবা যাত্রীর লাগেজ শতভাগ স্ক্যানিং হলে চোরচালানও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে আসবে।
একশ’ স্ক্যানার কেনার জন্য কি পরিমাণ খরচ হবে, সেটা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে গিয়াস কামাল জানান। তিনি বলেন,চলতি মাসের মধ্যে আমরা ব্যয় নির্ধারণ করতে পারব এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে স্ক্যানার কেনা শুরু হবে।
অর্থনীতি