কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা সড়কের অপর নাম জনদুর্ভোগ!

কলমাকান্দা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি

কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা সড়কের অপর নাম জনদুর্ভোগ
ছবি : শেখ শামীম

নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা ও ঠাকুরাকোনা (২১ কিমি) সড়কের যোগাযোগের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এ অঞ্চলে যাতায়াতকারী মানুষ। ঈদকে সামনে রেখে সড়কটিতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাড়তে পারে দুর্ঘটনাও।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নেত্রকোণার কলমাকান্দা ও ঠাকুরাকোনা (২১ কিমি)  সড়কটি  গত ২০১৭ সালের বন্যায় বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে যায়। বারবার সংস্কার কাজ হলেও কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কিছু দিন যেতে না যেতেই ২১ কিলোমিটার সড়কের পুরো সড়কেই ভেঙ্গে খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে।

universel cardiac hospital

গত ৫ বছরেও সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। অনেকেই প্রায় ২১ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছেন। ফলে সময় ও অর্থের অপচয় বাড়ছে। কলমাকান্দা বাসষ্ট্যান্ড হতে বাহাদুরকান্দা, গুতুরা বাজার হতে দশধার পর্যন্ত সড়কের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ।

স্থানীয় সড়ক বিভাগ প্রতিবছর ২/১ বার সড়কের ভাঙ্গা মেরামতের নামে (মেইনটেইন্স) বিপুল অংকের বরাদ্দে এনে দায়সাড়া ভাবে কাজ করছে । সড়কে ছোট-বড় খানাখন্দ তৈরী হওয়ায় তা চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে ইট এবড়ো থেবড়ো খানাখন্দে হেঁটে চলাচলেরও অনুপোযোগী।পাশাপাশি ছোটবড় অনেক খানাখন্দ তৈরি হওয়াতে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

পুরো সড়ক জুড়েই কোথাও কোথাও দেবে উচুঁ-নিচু হয়ে গেছে। আবার কোথাও কোথাও বড় বড়  গর্তে খানা-খন্দে পরিণত পরিণত হওয়ায় ৬ মাস ধরে ২/৩ নম্বর আধলা (নষ্ট) ইট দিয়ে, জুড়াতালি দিয়ে রাখা হয়েছে। রাস্তার উভয় পাশের স্থানে স্থানে ভেঙ্গে গেছে।

ফলে যানবাহন চলা দুরের কথা পথচারীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই হোঁচট খায়। রাস্তার চরম বেহাল অবস্থা থাকায় মটর সাইকেলসহ মালবাহী যানবাহন বিকল্প রাস্তা ধরে পাবই- সিধলী সড়ক হয়ে রাস্তা ঘুরে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে চলাচল করছে।

হীরাকান্দা গ্রামের জালাল আকন্দ, পাবই গ্রামের আলী উসমানের ছেলে মোজাম্মেল হক, একই গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে ডিপ্টি মিয়া, রায়পুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ ফকির বলেন, এই রাস্তাটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। রাস্তাটি ৫/৬ বছর আগে নামকাওয়াস্তে মেরামত করা হয়েছিল। বেশিদিন টিকে নাই। তারপর আমাদের এলাকা নীচু-হাওর এলাকা, কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোণা ২১ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কটি মূলতই উচ্চতা কম, বন্যার পানিতে সহজেই নিমজ্জিত হয়ে যায়। কাজেই সরকার সঠিক পরিকল্পনা করে সঠিক কাজ করলে এই সড়কের এমন বেহাল-দশা হতো না।

গুতুরা-বটতলা গ্রামের কায়ছার ও দশধার গ্রামের দবীর হোসেন ও হুমায়ন কবীর জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে এই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী, যোগাযোগের জন্য করুন অবস্থা। অথচ এই রাস্তা দিয়ে সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দা, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর এলাকা ও নেত্রকোণার গ্রামের মানুষ, বাহাদুরকান্দা, ডুবিয়ারকোণা, গুডমন্ডল, পাবই, হিরাকান্দা, নিশ্চিন্তপুর, বাইশদার, দশধার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাই স্কুল সহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার, হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয়।

অপরদিকে, সালিপুরা গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদির উদ্দীনসহ ঠাকুরাকোণা, বাইশদার, বাউসীর অনেকই  জানান, কলমাকান্দা বাসষ্ট্যান্ড থেকে গুতুরা বাজার, পাবই থেকে  দশধার পর্যন্ত এবং দশধার থেকেও ঠাকুরাকোণা সড়কের পুরো রাস্তা জুড়েই বড়-বড় গর্ত, খানাখন্দকে ভরে গেছে।

সেগুলো জোড়াতালি দিয়ে রাখা হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে বিভিন্ন ধরনের শত-শত যানবাহন। সড়কটিতে খানাখন্দ থাকায় এবং বেইলি ব্রীজগুলো অকেজো ও ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় প্রায় কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। হতাহত হচ্ছেন অনেকেই।

অথচ গত দু’বছর আগে সড়কটি নির্মাণ বাবদ প্রায় কোটি টাকা এবং সম্প্রতি সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য ১ কোটি টাকা খরচ  করা হলেও কোন কাজই আসছে না এলাকাবাসীর। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে চরম দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ ও ভোগান্তি লাঘবে কলমাকান্দা উপজেলার সাথে জেলা শহর নেত্রকোনা হয়ে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে কলমাকান্দা ও ঠাকুরাকোনা (২১ কিমি) সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ করে ঈদ ও বর্ষার পূর্বেই উন্নয়ন ও সংস্কার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুর আলম তরফদারের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, সড়কটি  গত ১৭ সালের বন্যায় বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে যায়। এর পর থেকে এ সড়কে জন দুর্ভোগ চরম আকারে বেড়ে গেছে।  সড়কটির জন্য ৩১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ বছর ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। আমরা এর মধ্যে সড়কের রি টেন্ডার করেছি। ল্যান্ড সার্ভে চলছে। তবে ঈদ ও বর্ষার পূর্বে জরুরি ভিত্তিতে সাময়িক মেইনটেইন্স করে চলাচলের জন্য উপোযোগী করে দেয়া হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে