মাঠে আ’লীগের নিকেতা, কেউ নেই বিএনপির

বিশেষ প্রতিনিধি

বিএনপি-নির্বাচন কমিশন
ফাইল ছবি

বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা যুগ্ম সম্পাদক এসএমটি জামান নিকেতা মনোনয়ন পেয়ে মাঠে নেমেছেন। একই সঙ্গে গণসংযোগ শুরু করেছেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমরসহ বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন তারা।

তবে এখন পর্যন্ত মাঠে নেই বিএনপির কোনো প্রার্থী। কেন্দ্রীয়ভাবে দলটি এখনও নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা না দিলেও এতে অংশ নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি- এমন আভাস দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা।

universel cardiac hospital

বিএনপির ঘাঁটিখ্যাত বগুড়া সদর আসনে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। শপথ না নেয়ায় আসনটি শূন্য হয়। তফসিল অনুসারে ২৪ জুন নির্বাচনের তারিখ ধার্য হয়েছে। ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

২৩ মে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। ৮ মে তফসিল ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বেশ কয়েকজন হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১৮ মে পর্যন্ত ৮ জন দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড নিকেতাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে।

বগুড়া সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া টি. জামান নিকেতা জানান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। পরে তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি নির্বাচনে ভালো ফল করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপি বগুড়ার মানুষের ভোটের প্রতি সম্মান দেখাতে পারে না। চারজন শপথ নিলেও একজন নেননি। তারা মানুষের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তাই বগুড়ার মানুষ এবার ভুল না করে তাকে ভোট দেবেন।

তিনি আরও বলেন, ভূমিদস্যুতা বা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন তিনি। পরীক্ষিত নেতা হিসেবে সবাই তাকে ভোট দেবেন বলে তিনি আশা করেন। জনগণ আমাকে সুযোগ দিলে বগুড়ার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে পরিকল্পনা করবেন। এরপর নেত্রীর কাছে প্রকল্প চেয়ে নেবেন। তিনি আশা করেন, বগুড়ার উন্নয়নে যা চাইবেন নেত্রী তাকে সে মোতাবেক বরাদ্দ দেবেন। নিকেতা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর ২৩ মে বগুড়ার রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।

এদিকে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরও বগুড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস বা আনন্দ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সোমবার শহরের বিভিন্ন অলিগলি ও সব জায়গায় আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। নিকেতাকে মনোনয়ন দেয়ায় জেলার সিনিয়র নেতাদের একাংশ ক্ষুব্ধ হলেও প্রকাশ্যে তারা কিছু বলছেন না। জানতে চাইলে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, আমিও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমি মেনে নিয়েছি।

সূত্র জানায়, বগুড়া উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি এমনটা ধরে নিয়ে প্রার্থী খোঁজার কাজ শুরু করেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। কেন্দ্রীয় না স্থানীয় কোন পর্যায়ের নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তা নিয়ে দলের ভেতর ও বাইরে চলছে নানা আলোচনা। তবে দলটির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বগুড়াতে স্থানীয় কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিএম সিরাজ মনোনয়ন পেতে পারেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে প্রার্থী করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করেছিল দলটির হাইকমান্ড। সে লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রার্থী হতে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়। তবে শর্ত হিসেবে তাকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু দল ত্যাগ করে মান্না নির্বাচন করতে রাজি নন। মান্না ছাড়াও কেন্দ্রীয় সিনিয়র কাউকে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তা করে দলটি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশ করেন।

এমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় নেতাদের মধ্য থেকেই মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্থানীয়দের মধ্যে এগিয়ে আছেন সাবেক এমপি জিএম সিরাজ। তিনি বগুড়া-৫ আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন। সম্প্রতি বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে তাকে। বর্তমানে হাইকমান্ডের বেশ আস্থাভাজন তিনি।

জানতে চাইলে জিএম সিরাজ বলেন, আমি নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি। হাইকমান্ড যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করব। জিএম সিরাজ ছাড়াও নির্বাচন করতে চান সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা একেএম মাহবুবুর রহমান, জেলার সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, রেজাউল করিম বাদশা, জয়নাল আবেদীন চাঁন প্রমুখ।

তবে বিএনপির অপর একটি সূত্র জানায়, উপনির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে দল ইতিবাচক হলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তৃণমূলসহ দলের বড় একটি অংশ এ নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নয়। তাদের মতে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে যাওয়া মানে তাদের বৈধতা দেয়া। ভবিষ্যতে এ ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অদূর ভবিষ্যৎও চিন্তা করতে হবে।

এদিকে সদ্য ঘোষিত জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে সৃষ্ট কোন্দল ও সদর আসনে প্রার্থী সম্পর্কে মতামত নিতে বগুড়া জেলা নেতাদের আজ ঢাকায় তলব করা হয়েছে। নতুন কমিটি নিয়ে সৃষ্ট কোন্দল নিরসন করতেই তাদের ডাকা হচ্ছে। বিরোধ নিরসনসহ আসন্ন বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে প্রার্র্থী বাছাই নিয়েও জেলা নেতাদের মতামত নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী আজগর তালুকদার হেনা জানান, বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। মঙ্গলবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক রয়েছে। সেখানে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।

বগুড়া সদর আসনে মহাজোটের সাবেক এমপি জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর জানান, তিনি এবারও মহাজোটের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। জাপা থেকে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাই তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তার বিশ্বাস তিনি ভালো ফলাফল করবেন।

এ মুহূর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সাবেক শ্রমিক নেতা সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু, সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুর রহমান রাজ ভাণ্ডারী, স্বর্ণ ব্যবসায়ী আবুল হাসান ও জাফর আলী। মিঠু জানান, তিনি ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করেছে। রাজ ভাণ্ডারী জানান, শিগগিরই তিনি মনোনয়ন দাখিল করে মাঠে নেমে পড়বেন।

এছাড়া রাজনৈতিক দল সদ্য নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা আহ্বায়ক ড. মনসুর রহমান জানান, তাকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি ডাব প্রতীক নিয়ে বগুড়া সদর আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হবেন।

বগুড়ার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও সদর আসনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুব আলম শাহ জানান, ২৪ জুন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সোমবার বিকাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর এবং ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে