ক্ষমা চাইলেন হুমায়ূন পুত্র নুহাশ

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছতে সম্প্রতি চীনা মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেকনো’র একটি বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেছেন পরিচালক নুহাশ হুমায়ুন।

কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা পরিচালক নুহাশ হুমায়ুনকে ঘিরে দ্বিধাভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বলছেন বিজ্ঞাপনচিত্রটি যে বার্তা দিচ্ছে সেটা প্রশংসনীয়। আবার কারো মতে, একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে তাচ্ছিল্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক।

universel cardiac hospital

‘রানিং রাফি’ শিরোনামে নির্মিত বিজ্ঞাপন চিত্রটি ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে’ নির্মিত বলে দাবি করা হচ্ছে। সেখানে দেখানো হয়েছে- বান্দরবানের আদিবাসী কিশোর রাফি রমজান মাসে সেহরি এবং ইফতারের সময় স্থানীয় মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ডেকে দেওয়ার জন্য দৌঁড়ে দ্বারে দ্বারে যায়। কারণ চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় মসজিদের সংখ্যা কম হওয়ায় মুসলিমরা আজানের শব্দ শুনতে পান না। ফলে তাদের পক্ষে সঠিক সময়ে সেহরি কিংবা ইফতার করতে পারেন না।

বিজ্ঞাপনচিত্রটি প্রকাশ হতে না হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর গল্পে থাকা অসঙ্গতিগুলোর সমালোচনা করেছেন দর্শকরা। তাদের প্রশ্ন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক কিশোরের নাম কীভাবে রাফি হয়?’

স্থানীয় আদিবাসীদের মতো মুসলিমরাও কেন বাঁশের তৈরি বাড়িতে থাকেন? বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরাও।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুহাশ হুমায়ুন বলেন, ‘এই বিজ্ঞাপনটি আমি নির্মাণ করেছি কিন্তু এটার মুল ভাবনা আমার ছিল না। থার্ড পার্টি যখন কনসেপ্টটা-টা দেয়, আমার কাছে ভাল লাগে। কনসেপ্টটা হলো পরিবার নিয়ে। একটা প্রত্যন্ত গ্রাম।

যেখানে মুসলিমরা হলো সংখ্যালঘু। এটা রমজান মাসের উপর ফোকাস করা একটা বিজ্ঞাপন। কিন্তু এর মূল ভাবনা শুধু রমজানের রোজা রাখায় সীমাবদ্ধ না। এটা একাত্মতা আর বন্ধনেরও গল্প। আমার কাজটি যেন বাস্তবসম্মত হয়, তাই আমি আমার টিমে এথনিক কমিয়্যুনিটি থেকে প্রতিনিধি রেখেছিলাম।

কিন্তু যেহেতু বিজ্ঞাপনের প্রথমে লেখা দেখায়-‘A Nuhash Humayun Film’, তাই পরিচালক হিসাবে এর সব দায়িত্ব আমারই। এই বিজ্ঞাপনটা আমিই নির্মাণ করেছি, গল্পটাও আমার পছন্দ হয়েছে, এর স্ক্রিপ্ট আমি পরিমার্জন করেছি, যেই সোর্স থেকে তথ্য পেয়েছি –তাও বিশ্বাস করেই ব্যাবহার করেছি।

এই বিজ্ঞাপনের সব দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়েই, আমি গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি তাদের কাছে, যারা বিজ্ঞাপনটি দেখে কোনভাবে কষ্ট পেয়েছেন অথবা যাদের কাছে মনে হয়েছে আমি চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছি। আমি বিনীত ভাবে জানাতে চাই, কাউকে কষ্ট দেয়া বা আঘাত করা কখনই আমার উদ্দেশ্য ছিলনা।

চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর সমস্যা মিডিয়াতে তেমনভাবে সামনে আসেনা। আমরা সেইসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে বাদ দিয়ে বিজ্ঞাপনটা নির্মাণ করেছি খুব সরলীকরণ করে, দেখে ভাল লাগবে এমন একটা গল্প নিয়ে। যেখানে অবশ্যই আগে চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সেইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসা প্রয়োজন ছিল।

অনেক মানুষ আমাকে তাদের মতামত জানাচ্ছেন। কিছু ভাল, কিছু খারাপ আর কিছু বেশ কঠিন। অবশ্যই এইসব মতামত আমাকে নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো অনেক দায়িত্ববান ও যত্নশীল করে তুলবে।

আমি এটাও দেখলাম অনেকেই এখানে টেনে আনছেন আমার পরিবারকে, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন আমাকে, যেই ছেলেটি বিজ্ঞাপনের প্রধান ভুমিকায় অভিনয় করেছেন-তাকেও নোংরা ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এইসব ঘৃণা প্রকাশ মূল বিষয়ের সাথে সংগতিহীন।

এই বিজ্ঞাপনের গল্পটি আমার ভাল লেগেছিল, কারন এটার মূল ভাবনা ছিল একাত্মতা প্রকাশ। আমার ভাবতে খুব খারাপ লাগছে, এই বিজ্ঞাপনটা কোনভাবে বিভেদ তৈরি করছে! কোনভাবেই সেটা আমার উদ্দেশ্য ছিলোনা।

যারা এই বিজ্ঞাপনটি নিয়ে লিখছেন, কথা বলছেন, আর ভাল মন্দ যাই ভাবছেন-আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমি আপনাদের কথা শুনছি, শিখছি আর আর পরিণত হচ্ছি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে