১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ক্রিকেট খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গ্রেট ব্রিটেন ১৫৮ রানের ব্যবধানে ফ্রান্সকে হারিয়েছিল। পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ক্রিকেট খেলা বাদ দেয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হিসেবে ১৯১২ সালে ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রথম প্রচেষ্টা চালানো হয়। ঐ সময়ে টেস্টভুক্ত ৩টি দেশ – ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট প্রতিযোগিতাটি প্রতিকূল আবহাওয়া ও দর্শকদের অনাগ্রহের কারণে ভণ্ডুল হয়ে যায়। পরীক্ষামূলকভাবে পরবর্তীতে আর চেষ্টা চালানো হয়নি। তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট অঙ্গনে সংশ্লিষ্ট এ দলগুলো দ্বি-পক্ষীয় সিরিজে পরিণত হয় ও প্রতিযোগিতার বিপক্ষে অথবা দুই দেশের বাইরে লীগের বিরোধিতা করে।
- আরও পড়ুন >> আমরা এবার বিশ্বকাপ জিততে পারি : সাকিব
১৯৬০-এর দশকের শুরুতে কাউন্টি ক্রিকেটে ইংরেজ দলগুলো ক্রিকেটের স্বল্প সংস্করণে জড়িয়ে পড়ে যা কেবলমাত্র একদিন সময়ের ছিল। ১৯৬২ সালে ৪-দল নিয়ে গড়া মিডল্যান্ডস নক-আউট কাপ ও ১৯৬৩ সালে জিলেট কাপের প্রচলন শুরু হয়। ক্রমে একদিনের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ১৯৬৯ সালে সানডে লীগ নামে একটি জাতীয় লীগের আয়োজন করা হয়।
১৯৭১ সালে মেলবোর্নে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট খেলাটি বৃষ্টির কারণে চারদিন খেলার অনুপযুক্ত ছিল। নির্ধারিত চূড়ান্ত ও পঞ্চম দিনে প্রথমবারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজন করা হয়। উত্তেজিত দর্শকদের সামলাতে কর্তৃপক্ষ চল্লিশ ওভারের খেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন ৮-বলে এক ওভার গণ্য করা হতো।
এ সফলতা ও জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ঘরোয়াভিত্তিতে একদিনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকেন।
- আরও পড়ুন >> বিসিবি বিশ্বকাপ দলে কোনো পরিবর্তন আনবে না
অতঃপর ১৯৭৫ সালে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের উপর ক্রিকেট খেলুড়ে ৮টি দেশকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্বকাপ।
১৯৭৫, ইংল্যান্ডঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের প্রথম আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং পূর্ব আফ্রিকা।
এ আসরের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই ম্যাচে ডেনিস লিলি ও জেফ থমসনের গতি ও ক্রোধের সংমিশ্রণে করা বোলিংয়ের বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ৮৫ বলে ১০২ রানের এক অবিস্মরনীয় ইনিংস খেলেন ক্লাইভ লয়েড। ৫৫ রানের এক ইনিংস খেলে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন ৩৯ বছর বয়সী রোহান কানাই যা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নির্ধারিত ৬০ ওভার শেষে ২৯১ রান তুলতে সহায়তা করে।
ক্যারিবীয় বোলারদের গতির জবাবে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ৬২ রানের এক ক্যামিও ইনিংস খেলেন। কিন্তু ভিভ রিচার্ডসের হাতে রান আউট হয়ে তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে শেষ দিকে লিলি এবং থমসন ৪১ রানের জুটি গড়লেও শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ২৭৪ রানে অল আউট হয়ে যায়। ফলে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
- আরও পড়ুন >> বিশ্বকাপের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড
১৯৭৯, ইংল্যান্ডঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং কানাডা।
তবে বিশ্বকাপের এ আসর শুরুর কিছু আগে কেরি প্যাকার নামের একজন অস্ট্রেলিয়ান উদ্দ্যোক্তা ‘বিশ্ব সিরিজ’ নামে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু তৎকালীন ক্রিকেটের রাঘব-বোয়ালরা বিষয়টিকে ভাল চোঁখে দেখেনি। এ নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট দুই দলে ভাগ হয়ে যায়।
কিন্তু যারা কেরি প্যাকারকে সমর্থন দিয়েছিল তাদেরকে বিদ্রোহী ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড সে সব খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপ দলে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল যারা পরবর্তি এক দশক জুড়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করেছে, তারা বিদ্রোহী খেলোয়াড়দের সমন্বয়েই দল গঠন করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে।
তখনকার বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান রিচার্ডসের ডমিনেটিং ১৩৮ রান এবং কলিস কিং এর ৮৬ রানের ঝড়ো ইনিংসের সহায়তায় ইংল্যান্ডকে চূর্ণ করার নীল নকশা একে ফেলে ক্যারিবীয়রা। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মাইক ব্রেয়ারলি ও জাইফ বয়কটের দুরন্ত সূচনায় প্রথম উইকেটে ১২৯ রানের জুটি গড়ে ইংলিশরা।
কিন্তু এরপর ক্যারিবীয় বোলারদের বোলিং তোপে ব্যাটিং ধ্বস নামে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপে। ক্যারিবীয়ান বোলার জোয়েল গার্নার তার বিধ্বংসী ইয়র্কারে ১১ বলের মধ্যে ৫ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। ফলে নির্ধারিত ৬০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই ১৯৪ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। আর এতে ৯২ রানের জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৮৩, ইংল্যান্ডঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের তৃতীয় আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়ে।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল শেষ পর্যন্ত এ বিশ্বকাপে এসে ভারতের কাছে বিশ্ব ক্রিকেটের তাজ হারায়।
ভারতের ছূড়ে দেওয়া ১৮৪ রানের লক্ষ্য রিচার্ডসের ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ছিল মামুলি ব্যাপার। সেই লক্ষ্যে খেলতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় বোলার মদন লালের বোলিং নৈপুণ্যে মাত্র ছয় রানের ব্যবধানে ভিভ রিচার্ডস, ডেসমন্ড হেইন্স ও ল্যারি গোমসের উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। ফলে ব্যাটিং ধ্বসে ১৪০ রানে অল-আউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ৪৩ রানের ব্যবধানে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা অর্জন করে ভারত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভারতের এই জয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট খুব দ্রুত টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে পেছনে ফেলে। আর এর পর থেকেই ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণ হয়ে দাঁড়ায় সীমিত ওভারের একদিনের ক্রিকেট।
১৯৮৭, ভারত এবং পাকিস্তানঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের চতুর্থ আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং পূর্ব আফ্রিকা।
১৯৮৭ সালের এ প্রতিযোগিতাটি উপমহাদেশের ভারত ও পাকিস্তান যৌথভাবে আয়োজন করে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে অনুষ্ঠিত এই আসরের ফাইনাল খেলায় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড মুখোমুখি হয়। প্রথমবারের মতো ৫০ ওভারের ইনিংসে খেলা এ আসরের ফাইনালে প্রায় ৭০,০০০ দর্শক সমাগম হয়।
দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে অংশগ্রহণ করা দুই দলই তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম শিরোপা অর্জনের লড়াইয়ে নামে। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ডেভিড বুনের ১২৫ বলে ৭৫ রানের কার্যকরী ও মাইক ভেলেটার ৩১ বলে ৪৫ রানের ক্ষিপ্রগতির ইনিংসের কল্যাণে ৫ উইকেটে ২৫৩ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের বিল অ্যাথে, মাইক গ্যাটিং ও অ্যালান ল্যাম্বের মাঝারি সারির ব্যাটিংয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৭ রানের প্রয়োজন পড়ে ইংলিশদের। কিন্তু শেষ ওভারে দলটি সংগ্রহ করতে পারে মাত্র ৯ রান। ফলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ রানে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড।
১৯৯২, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের পঞ্চম আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ে।
১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিযোগিতাটি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে আয়োজন করে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত আসরের ফাইনাল ম্যাচটি প্রথমবারের মতো দিন/রাতে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলতে নামা পাকিস্তান টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুর দিকে ডেরেক প্রিঙ্গল দুই উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলার চেষ্টা করলেও তৃতীয় উইকেট জুটিতে ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ জুটিতে স্কোরবোর্ডে ১৩৯ রান যোগ হয়। শেষপর্যন্ত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে হারিয়ে ২৪৯ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওয়াসিম আকরামের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা দিশেহারা ও বিভ্রান্ত হয়ে উইকেট বিলিয়ে আসতে থাকে। ফলে ইংল্যান্ড ২২৭ রানে অলআউট হয়ে গিয়ে পাকিস্তানকে ২২ রানের জয় উপহার দেয়। সেই ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরস্কার লাভ করেন ওয়াসিম আকরাম।
১৯৯৬, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বিশ্বকাপের এ আসরে শ্রীলঙ্কাসহ ভারত ও পাকিস্তান যৌথভাবে সহআয়োজকের দায়িত্ব পায়। এ প্রতিযোগীতায় প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
লাহোরের গাদ্দাফী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলায় টসে জিতে অর্জুনা রানাতুঙ্গা প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মার্ক টেলর ও রিকি পন্টিং দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১০১ রান করে দলকে ২৪১ রানের পুঁজি সংগ্রহ করতে বড় ভূমিকা পালন করেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে অরবিন্দ ডি সিলভার সেঞ্চুরি এবং অশঙ্কা গুরুসিনহা ও রানা তুঙ্গা জুটির বদৌলতে শ্রীলঙ্কা জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ২২ বল বাকী থাকতেই। এই জয়ে প্রথমবারের মতো কোন স্বাগতিক দল জয়ী হয়, যদিও ফাইনাল ম্যাচ পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই ম্যাচে অরবিন্দ ডি সিলভা ম্যাচ সেরার পুরষ্কার লাভ করেন।
১৯৯৯, ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের সপ্তম আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ, কেনিয়া এবং স্কটল্যান্ড।
ইতিহাসে চতুর্থ বারের মতো ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া ১৯৯৯ সালের এ বিশ্বকাপে ফাইনালে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান। একচেটিয়া ম্যাচে শেন ওয়ার্নের ঘুর্ণি জাদুতে ১৩২ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।
অল্প রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের দূর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরি এবং মার্ক ওয়াহ, রিকি পন্টিং ও ড্যারেন লেহম্যানের ছোট ছোট ইনিংসের সহযোগীতায় অস্ট্রেলিয়া মাত্র ২০ ওভারের মধ্যেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। অস্ট্রেলিয়া দলের আট উইকেটের জয়ে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার লাভ করেন শেন ওয়ার্ন।
২০০৩, সাউথ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়াঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, কানাডা, নামিবিয়া এবং নেদারল্যান্ডস।
২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপের এ আসর আয়োজনের দায়িত্ব পালন করে সাউথ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়া।
দুইবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয় দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠা ভারতের বিপক্ষে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের অপরাজিত ১৪০ রানের ইনিংসের সুবাদে ৩৫৯ রানের পাহাড়সম রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারের অনেক আগেই ২৩৪ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার লাভ করেন অধিনায়ক রিকি পন্টিং।
এ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়েতে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় ইংল্যান্ড। তাছাড়া এ বিশ্বকাপেই কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে দুই জিম্বাবুয়েন ক্রিকেটার অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার এবং হেনরি অলংঙ্গা “আমাদের প্রিয় জিম্বাবুয়েতে গণতন্ত্রের মৃত্যু” -এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কালো ব্যান্ড পরে মাঠে নেমেছিলেন।
২০০৭, ওয়েস্ট ইন্ডিজঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের নবম আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, বারমুডা, কানাডা, কেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপের এ আসরে টানা তৃতীয় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের আগেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ জেতা অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের মাঝে আত্মবিশ্বাসের কমতি ছিল না। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা অস্ট্রেলিয়া শেষপর্যন্ত ফাইনালে মুখোমুখি হয় দ্বিতীয় বারের মতো ফাইনালে ওঠা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান উইকেট কিপার গিলক্রিস্টের ১৪৯ রানের দানবীয় ইনিংসের উপর ভর করে ২৮১ রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারের খেলা শেষে ২১৫ রান তুলতে সক্ষম হয় শ্রীলঙ্কা। অস্ট্রেলিয়ার ৫৩ রানের জয়ে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার লাভ করেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।
২০১১, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের দশম আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, কেনিয়া এবং নেদারল্যান্ডস।
২০১১ সালের এ আসরে প্রথমবারের মতো ভারত ও শ্রীলঙ্কার সাথে বিশ্বকাপ আয়োজনের গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। এ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকেও সহ আয়োজক হিসেবে রাখা হয়েছিল, কিন্তু ২০০৯ সালে সফররত শ্রীলঙ্কান দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার কারনে নিরাপত্তা জনিত কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করা হয়।
১৯৯২ সালের পর এই প্রথম কোন বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে মুখোমুখি হয়ে দীর্ঘ ২৭ বছরের বিশ্বকাপ শিরোপা খরা ঘোচায় ভারত। মাহেলা জয়বর্ধনের অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংসের সুবাদের ২৭৪ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার গৌতম গম্ভীরের ৯৭ এবং অধিনায়ক ধোনির অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংসের সুবাদে ৪ উইকেট হারিয়ে ১০ বল বাকি থাকতেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত।
২০১৫, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডঃ
এটি ছিল বিশ্বকাপের একাদশ আসর। এ আসরে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বিশ্বকাপের এ আসরে অস্ট্রেলিয়া ফের তাদের বিশ্বকাপ তাজ ফিরে পায়। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের তোপের মুখে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে কিউইরা। শেষ পর্যন্ত গ্র্যান্ট ইলিওটের ৮৩ রানের সুবাদে ১৮৩ রানের মামুলি পুঁজি পায় নিউজিলান্ড।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাইকেল ক্লার্কের ৭৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে নির্ধারিত ওভারের অনেক আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম বারের মতো শিরোপা জয়ের এই দিনে ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক এক দিনের ম্যাচ খেলেন মাইকেল ক্লার্ক, ব্র্যাড হাডিন, মিচেল জনসন এবং ড্যানিয়েল ভেটরি।