“উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কৃষির যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে স্থায়ী মূল্য কমিশন গঠন করা দরকার।”
কৃষক বর্তমান বাজারদরে প্রতি মণ ধানে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লোকসান করছে। আর কৃষকের ক্ষতি পোষাতে সরকারকে ৫০ লাখ টন ধান কেনার পাশাপাশি আসন্ন আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অ্যাকশন এইড-এর সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ধানসহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে এসব দাবি করেন বক্তারা।
‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ ও ‘পিকেএসএফ’-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কৃষির যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে স্থায়ী মূল্য কমিশন গঠন করা দরকার। আরও দরকার শক্তিশালী কৃষক সংগঠন।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, উন্নত দেশগুলোতেও সরকার খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভর্তুকি দেয়। আমাদের সরকারও এক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে থাকে, কিন্তু এর সুফল আমাদের কৃষকরা সেভাবে পান না মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। এর একটা বড় কারণ হলো কৃষকরা এ দেশে অসংগঠিত।
আনোয়ার ফারুক বলেন, বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা কৃষককে সংকটে ফেলে দিয়েছে। এ মুহূর্তে কৃষককে তিন/চার মাসের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের স্থানভেদে বিকল্প কৃষি উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক সংকট সমাধানে সরকারকে সংবেদনশীল মনে হয়নি। সরকার মাঠ থেকে দ্রুত প্রকৃত তথ্য নেয়ার চেষ্টা করতে পারত। সরকারের সামর্থ্য না থাকলে গৃহস্থের ঘরেই ধান মজুদ রাখার উদ্যোগ নিতে পারত সরকার।
সায়েমা হক বিদিশা বলেন, ধান আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো-বাড়ানোর তাৎক্ষণিক সুফল কৃষকরা পান না। এক্ষেত্রে গবেষণা ও মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সাহানোয়ার সাঈদ শাহীন দেশের বর্তমান কৃষি খাতের চিত্র তুলে ধরেন।
- কঙ্গোয় নৌকাডুবিতে নিহত ৪৫, নিখোঁজ ২০০
- কেটে ফেলা হলো সাহসী কনস্টেবল পারভেজের পা
- কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৯ ‘বিতর্কিত’ খুঁজে পেয়েছে ছাত্রলীগ
তিনি বলেন, দেশে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। কৃষককে বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারা আমাদের একটি বড় ব্যর্থতা। এক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। উৎপাদিত ধানের মাত্র ছয় শতাংশ মজুদের ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও উপকরণ ব্যবহারে অদক্ষতা ও প্রতারণার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। এছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি ব্যবহারেও ভারসাম্যহীনতা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সুপারিশে তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকারি শস্য মজুদের পরিমাণ আগামী দুই বছরের মধ্যে ৬০ লাখ টনে উন্নীতের পাশাপাশি কমিউনিটি ভিত্তিক শস্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে।