দরিদ্রদের ২ লাখ টাকা করে ঋণ দেবে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি

দরিদ্রদের ২ লাখ টাকা করে ঋণ দেবে সরকার
ফাইল ছবি

সরকার গ্রামকে সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য ও ভিক্ষুকমুক্ত করতে দরিদ্রদের সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা করে ঋণ দেবে। এ লক্ষ্যে ‘জাতীয় সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০১৯’ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এ নীতিমালার মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থার সঞ্চয় এবং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে এক ছাতার নিচে আনা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ৮ বিভাগের দরিদ্রতম ৮ উপজেলায় পরীক্ষামূলক ঋণ দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে সারাদেশে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জাতীয় সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ বাস্তবায়ন নীতিমালার আলোকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যক্রম সমন্বয়, পরীবিক্ষণ, তদারকি, মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন করবে। নীতিমালাটি প্রণয়নও করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সমাজসেবা অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) সরকারের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয় অনুবিভাগ) এ কে মহিউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাতীয় সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে নীতিমালাটি প্রণয়নে মূল ভূমিকা পালন করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয়, দফতর, সংস্থা দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা ও নীতিমালা অনুযায়ী আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এজন্য একই ব্যক্তির একাধিক মন্ত্রণালয় থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ, আবার ঋণ পাওয়ার যোগ্য অনেকেই ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

এ বিষয়ে একটি সমন্বিত রূপ দিতে ‘সবাই মিলে গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের ধারণাপত্র তৈরি করা হয়

তিনি আরও জানান, ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এ ধারণাপত্রটি তার কাছে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে একই ছাতার নিচে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দেন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে সারাদেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে শহর এলাকাকে সুসংগঠিত, টেকসই, আত্মনির্ভরশীল, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, ভিক্ষুকমুক্ত এলাকায় রূপান্তর করা এবং দ্বৈততা পরিহার করা প্রয়োজন।

এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এ অঙ্গীকার পূরণে সারাদেশে গ্রাম ও শহর এলাকাকে পর্যায়ক্রমে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

নীতিমালার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব গ্রামকে সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য ও ভিক্ষুকমুক্ত গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ‘মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন, ২০০৬’ এবং ‘মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা, ২০১০’ এ নীতিমালার বাইরে থাকবে।

সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ জরিপের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বার্ষিক গড়ের ভিত্তিতে পরিবারগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হবে। বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে থাকবে ‘ক’ শ্রেণির পরিবার। ‘খ’ শ্রেণিতে থাকবে, যাদের আয় এক লাখ এক টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। ‘গ’ শ্রেণিভুক্তদের বার্ষিক আয় দুই লাখ এক টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, মূলধনের অপর্যাপ্ততার কারণে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ‘ক’ শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কেবল ‘ক’ ও ‘খ’ শ্রেণির মধ্যে ঋণ বিতরণ সাময়িকভাবে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। তবে বরাদ্দপ্রাপ্ত সাপেক্ষে ‘গ’ শ্রেণিকেও ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

সূত্র মতে, প্রতিটি এলাকায় অতিদরিদ্র বা দরিদ্র পরিবার চিহ্নিত করতে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব বিভাগের উপজেলা/ইউনিয়ন/পৌরসভা পর্যায়ে জনবল বা স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে এলাকায় উঠোন বৈঠক করে পরিবার জরিপ করা হবে।

ঋণ প্রদানে পেশা হিসেবে বাদাম বিক্রি, গবাদি পশু ক্রয়, হাঁস-মুরগির খামার আছে এমন দরিদ্র ও হতদরিদ্র ব্যক্তি তাদের পণ্যের বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইউনিয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণ দেয়া হবে। তবে এ ঋণের পরিমাণ দুই লাখ টাকার বেশি হবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা যায়, জাতীয় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক জাতীয় কমিটি সময়ে সময়ে সার্ভিস চার্জের হার নির্ধারণ করবে। অভিন্ন সার্ভিস চার্জ ৫ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতীয় সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ নীতিমালার আলোকে ১২টি কিস্তির মাধ্যমে বা উপজেলা কমিটি নির্ধারিত কিস্তি অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে প্রথম দুই কিস্তি গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হবে অর্থাৎ সার্ভিস চার্জ তৃতীয় কিস্তি থেকে আদায়যোগ্য হবে। এছাড়া পেশাভিত্তিক যেমন- গরু, ছাগল ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছয় মাস পর থেকে কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।

সূত্র মতে, পাইলট প্রকল্প থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে গ্রাম থেকে শহরে শুরু করে সারাদেশে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যন্ত দরিদ্র গ্রাম অঞ্চল, পশ্চাৎপদ এলাকা, হাওর, চর ইত্যাদি এলাকার জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা, সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলা ও ঋণ সুবিধা দেয়া হচ্ছে এ কর্মদল গঠনের উদ্দেশ্য।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে