হজযাত্রা : সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় গঠিত হচ্ছে অধিদপ্তর

বিশেষ প্রতিনিধি

হজ
ফাইল ছবি

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এবার গঠিত হচ্ছে হজ অধিদপ্তর। এর অধীন একাধিক আঞ্চলিক হজ অফিস পরিচালিত হবে। এছাড়া অধিদপ্তর এবং এর অধীন দপ্তরের জন্য সরকার অনুমোদিত নির্দিষ্ট জনবল কাঠামো থাকবে বলেও জানা গেছে।

জানা যায়, হজ অধিদপ্তর আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী আকাশপথে অথবা সমুদ্রপথে হজযাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় হজযাত্রী পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এয়ারলাইন্স বা সমুদ্রগামী যাত্রীবাহী জাহাজ ভাড়া করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাধীনতার পর থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে অধিদপ্তর গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রণীত হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১৯- এ খসড়া হজ অধিদপ্তর গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

খসড়া আইনটি সম্পর্কে মতামত গ্রহণের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় আজ সোমবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।

খসড়া আইনে হজ এজেন্সির অনিয়ম বা অসদাচরণের জন্য হজ এজেন্সির ক্ষেত্রে অনধিক এক কোটি টাকা এবং ওমরাহ পালনে অনধিক ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, আংশিক জামানত বাজেয়াপ্ত, জামানত বাজেয়াপ্ত, লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত, লাইসেন্স বাতিল, সতর্কীকরণ, তিরস্কার ও কোনো ওমরাহ হজ এজেন্সিকে অনিয়মের জন্য পরপর দুই বছর তিরস্কার করা হলে দ্বিতীয় বছরে ওই এজেন্সির লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হবে।

জানা যায়, খসড়া আইনে মোট ৩৩টি ধারায় প্রস্তাবনা, সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন, সংজ্ঞা, হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব, ই-হজ ব্যবস্থাপনা, বিশেষ ক্ষেত্রে তথ্য সরবরাহ, হজের কোটা, হজ প্যাকেজ ঘোষণা, হজযাত্রী প্রতিস্থাপন, হজ ব্যবস্থাপনা কমিটি, কমিটির সভা, কমিটির সিদ্ধান্তের বৈধতা, কমিটির ব্যয়, উপ-কমিটি গঠন, হজ অধিদপ্তর, হজ এজেন্সি নিয়োগ, এজেন্সি হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতা ও লাইসেন্সের শর্তাবলি, লাইসেন্সের মেয়াদ ও নবায়ন, লাইসেন্স বাতিল বা সাময়িক স্থগিতকরণ, লাইসেন্স সমর্পণ, এজেন্সি নিয়োগ ও লাইসেন্স সম্পর্কিত কমিটি, হজযাত্রী পরিবহন, ওমরাহ ও হজযাত্রীদের জন্য মক্কা-মদিনায় আবাসন, হজগাইড নিয়োগ, অস্থায়ী হজ কর্মচারী নিয়োগ, হজ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দল প্রেরণ, আপদকালীন ফান্ড, এজেন্সি কর্তৃক অনিয়ম বা অসদাচরণ, এজেন্সির অনিয়ম বা অসদাচরণের জন্য দণ্ড, দণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা, বাতিল অথবা স্থগিত, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা ,অসুবিধা দূরীকরণ ও আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।

খসড়া আইনে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং এ বিষয়ে আবশ্যক হলে ধর্ম মন্ত্রণালয় অন্য যেকোনো মন্ত্রণালয় বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সহায়তা গ্রহণ করতে পারবে।

খসড়া আইনে আরও বলা হয়, হজ ও ওমরাহ সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। যেসব হজযাত্রীর বয়স ১৮ বা তার চেয়ে বেশি তাদের প্রাক-নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজে যেতে ইচ্ছুক নিবন্ধিত প্রার্থীর মধ্য থেকে ক্রমানুযায়ী প্রতি বছর নির্দিষ্টসংখ্যক হজযাত্রীর তালিকা প্রাক-নিবন্ধনের জন্য প্রকাশ করবে। প্রাক-নিবন্ধিত তালিকা থেকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত কোনো হজযাত্রীর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনে ব্যর্থ হলে প্রাক-নিবন্ধনের প্রমাণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয়সংখ্যক হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

সৌদি সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে প্রতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী কোটা নির্ধারণ করা হবে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতি বছর হজসূচি প্রণয়ন করে হজের ব্যয়-সংক্রান্ত হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে।

খসড়ায় বলা হয়, সরকার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে সভাপতি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং হজ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ‘জাতীয় হজ ব্যবস্থাপনা কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করবে।

কমিটি প্রতি বছর ন্যূনতম তিনটি সভা করবে এবং কমিটির সভাপতি প্রয়োজনে যেকোনো সময় সভা ডাকতে পারবেন। সভাপতির অনুপস্থিতিতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সভায় সভাপতিত্ব করবেন।

এজেন্সি হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতার ক্ষেত্রে খসড়ায় বলা হয়, এজেন্সির ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ বছর এবং ওমরাহ এজেন্সির ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই বছর ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনায় পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। হজ ও ওমরাহ হজ লাইসেন্সের মেয়াদ হবে ৩ বছর।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, খসড়া আইনের ওপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত সংগ্রহের পর তা প্রথমে মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন এবং মন্ত্রিপরিষদ মতামত দিলে বিল আকারে সংসদে উত্থাপন হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে