আবারও সবুজ সমারোহে হাজির হয়েছে বর্ষাকাল। আজ শনিবার আষাঢ়ের প্রথম দিন। সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। রাজধানীসহ সারাদেশেই যেনো বর্ষার আগমনী বার্তা।
মেঘের তর্জন-গর্জনে মনে পরলো- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবেগময় গান ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সেই ধ্রুপদী পঙিক্ত ‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর/উথলিল নদ-নদী ধরনীর উপর’।
বর্ষার এ সময়ে পুষ্প-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে সবকিছুর মধ্যে। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ গ্রাম কিংবা নগরবাসী সবাইকে মুগ্ধ করে এ সময়ে।
ষড়ঋতুর এই দেশে আষাঢ়কে বলা হয় ঋতুর রানী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নব যৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’। রবীন্দ্রনাথ ও মধুসূদনের মতো বর্ষার রূপ-ঐশ্বর্যে মোহিত অনেক কবিই বাংলা সাহিত্য ঋদ্ধ করেছেন।
বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বতন্ত্র। বর্ষা কাব্যময়, প্রেমময়। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। শত ঘটনার ভিড়েও কোথায় যেন মেলে এক চিলতে বিশুদ্ধ সুখ।
আষাঢ়েই শোনা যায় রিমঝিম বৃষ্টির ছন্দ। নবধারা জলে ভিজে শীতল হওয়ার আহ্বান এখন প্রকৃতিতে। সব রুক্ষতাকে বিদায় জানিয়ে নরম কোমল হয়ে উঠবে বাংলার মাটি। নতুন প্রাণের আনন্দে অঙ্কুরিত হবে গাছপালা, ফসলের মাঠ। মাঠে মাঠে কৃষকের মুখে ফুটে উঠবে হাসি।
- আরও পড়ুন>> সেলিনা হোসেন ও বাংলা কথাসাহিত্য
বর্ষার প্রথম দিনেই রাজধানীতে ঝরছে বৃষ্টি। গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে কিছুটা হলেও ধুয়ে দিয়েছে এই বৃষ্টি। নদীতে উপচেপড়া জল, আকাশে ঘন মেঘের ঘনঘটায় বর্ষা যেন প্রকৃতিতে আনে অন্যরকম এক আবহ।
বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনী, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরও কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচেপড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি। রবিঠাকুরের ভাষায়, ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে…আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে…।’
তবে বর্ষা যেমন আনন্দের, বর্ষার নির্মম নৃত্য তেমনি হঠাৎ বিষাদে ভরিয়ে তোলে জনপদ। তবুও বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুনের আবাহন। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্যশস্য-বীজের উন্মেষ তো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকে।
বর্ষা তার ঝরঝর নির্ঝরণীতে আমাদের মনকে সিক্ত করে তোলে। মানুষের মনের কথাই শুধু বলি কেন, বর্ষা প্রাণরসে জাগিয়ে তোলে আমাদের প্রকৃতিকে। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষের মন যখন অস্থির হয়ে ওঠে, মানুষ ব্যাকুল বর্ষা বন্দনায় মত্ত হয়। যেন ‘কখন আসবে বর্ষা কখন জুড়াবে প্রাণ’ কাব্যিক ব্যঞ্জনার মতো।
আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। এটি বর্ষা মৌসুমে অন্তর্ভুক্ত দুই মাসের প্রথম মাস। আর নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে।