হিলিতে লোহার খনি আবিষ্কারের সম্ভাবনা

সারাদেশ ডেস্ক

হিলিতে লোহার খনির সম্ভাব্যতা যাচাই হচ্ছে
হিলিতে লোহার খনির সম্ভাব্যতা যাচাই হচ্ছে

দিনাজপুরের হিলিতে লোহার খনি আবিষ্কারের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ইতোমধ্যে সেখানে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জিএসবি) একটি দল খননকাজ চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখান থেকে লোহা ও চুম্বক জাতীয় পদার্থ পাওয়া গেছে, যা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এখন শুধু চূড়ান্ত রিপোর্টের অপেক্ষা। সব মিলিয়ে এখানে ভালো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর কর্তৃপক্ষ।

হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের ইশবপুর গ্রামে খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত ১৯ এপ্রিল দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ফিতা কেটে ড্রিলিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জিএসবি) ২২ সদস্যের একটি দল এই ড্রিলিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালে হাকিমপুর উপজেলার মুর্শিদপুর গ্রামে খনিজসম্পদ অনুসন্ধানে জরিপ কার্যক্রম চালায় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি), সেখানে লোহার আকরিকের সন্ধান পায় অনুসন্ধানকারী দল, যা বাংলাদেশে প্রথম ছিল। এর ওপর ভিত্তি করেই দ্বিতীয় পর্যায়ের জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছে অনুসন্ধানকারী দল।

ড্রিলিং কার্যক্রমে অংশ নেওয়া টিম সূত্রে জানা গেছে, ভূপৃষ্ঠের এত কাছে লোহার খনি আবিষ্কার দেশের মধ্যে এটাই হবে প্রথম, বিশ্বের মধ্যেও প্রথম ১০টির মধ্যে একটা ভালো অবস্থানে রয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, লোহার খনির সম্ভাবনার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ইতিবাচক সাড়া তৈরি করেছে। এলাকাবাসী খননকাজে সহযোগিতা করছেন। এখানে যদি খনি পাওয়া যায় তাহলে স্থানীয় মানুষজনের সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এলাকার উন্নয়ন হবে।

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, ‘আমাদের মাটির নিচে যে সম্পদটুকু রয়েছে সেটাকে যথাযথ ব্যবহারের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে এ ধরনের অসংখ্য জরিপ করছেন। সেটা গ্যাসের জন্য করছেন, কয়লা ও পাথরের জন্য করছেন, বিভিন্ন সম্পদের জন্য ড্রিলিং করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর হিলির ইশবপুর গ্রামে ড্রিলিং কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা কিছুদিন আগে উদ্বোধন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলার এক অংশ নিয়ে আমরা দিঘিপাড়া কয়লার খনি পেয়ে গেছি। আমরা আশা করছি হিলির ইশবপুরেও ভালো কিছু পেতে পারি। কয়লা বা এর চেয়ে উন্নত আরও কোনও কিছু পেতে পারি। আমরা আশা করছি, এখানে খনি হলে দেশের অগ্রগতির পাশাপাশি এলাকাবাসীর জীবনমানেরও উন্নয়ন হবে।’

ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের পরিচালক সাইদুল হোসেন এবং উপপরিচালক মাসুম ও মাসুদ রানা গণমাধ্যমকে জানান, এর আগে ২০১৩ সালের দিকে হাকিমপুরের মুর্শিদপুর গ্রামে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ইশবপুরে দ্বিতীয় দফায় অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। এখানে কী ধরনের ধাতব ও খনিজ পদার্থ রয়েছে সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য যেসব এলাকা চিহ্নিত করি, পরে সেখানে কূপ খনন করে ড্রিলিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। তারই অংশ হিসেবে হিলির ইশবপুর গ্রামে ড্রিলিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এখানে খনি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই আমরা এবার ঠিক সেন্টারে ড্রিলিং কার্যক্রম চালাচ্ছি। যদি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক মনে না হয়, তাহলে এখানে উত্তোলন করে সুবিধা পাওয়া যাবে না। আমরা অর্থনৈতিক দিকটি বিবেচনা করছি। এখানে ধাতব খনিজ সম্পদের মজুত ও বিস্তৃতি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ড্রিলিং কার্যক্রম চলছে।

তিনি আরও বলেন,গত ১৯ এপ্রিল এই কাজ শুরু হয়েছে, এটি তিন-চার মাস ধরে চলবে। আমরা এখানে ড্রিলিং কার্যক্রমে নিচ থেকে কাদা, বালি বা আদি শিলা সব নমুনা সংগ্রহ করছি। সেগুলো সংগ্রহ করে আমরা আমাদের পেশাগত জ্ঞান দিয়ে অ্যানালাইসিস করছি। সবকিছু মিলিয়ে এখানে এখন পর্যন্ত আমরা যা পেয়েছি তাতে করে এখানে ভালো কিছু পাওয়া যাবে বলে আমরা সংকেত পাচ্ছি।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে