মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রোহিঙ্গা
ফাইল ছবি

জাতিসংঘ রাখাইন সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। সংস্থাটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরকারের জাতিবিদ্বেষী নীতির কারণে ত্রাণ সহায়তা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কেনাট ওস্টবি নেপিদোকে চিঠি দিয়ে এই বার্তা জানিয়ে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়ে যে রোহিঙ্গারা এখনও রাখাইনের শরণার্থী শিবিরে (ইন্টারন্যালি ডিসপ্লেসড পার্সনস-আইডিপি ক্যাম্প) থেকে গেছে, তাদের মৌলিক মানবাধিকার ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। মিয়ানমার অবশ্য চিঠিটিকে হুমকি হিসেবে মানতে নারাজ। তাদের দাবি, ওই চিঠিতে সহায়তার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

universel cardiac hospital

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ।

জাতিগত নিধনের ভয়াবহ বাস্তবতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড় অংশটি বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও জাতিসংঘের হিসাবে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এখনো সেখানে থেকে গেছে।

দ্য গার্ডিয়ানের হিসাব অনুযায়ী, রাখাইনে থাকা অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ।

২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য স্থাপন করা হয় আইডিপি ক্যাম্প। তখন থেকেই এই ক্যাম্পে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা ও কামান জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার সদস্য এসব ক্যাম্পে বসবাস করে। তবে তাদের চলাফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী নতুন অভিযান জোরালো করার পাশাপাশি এসব ক্যাম্প বন্ধ শুরুর অঙ্গীকার করে মিয়ানমার সরকার। তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উল্টো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের পরিস্থিতি দিনকে দিন আরও অবনতির দিকে গেছে।

২০১৮ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘ তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হওয়া এসব মানুষ সেখানকার শিবিরে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। সংস্থাটির ত্রাণবিষয়ক উপ-প্রধান উরসুলা মুলার সে সময় দাবি করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোযোগী হলেও রাখাইনে থেকে যাওয়া ওই ৪ লাখ রোহিঙ্গা আলোচনার বাইরে রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের বাস্তবতাকে প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যা দিয়ে রাখাইন পরিস্থিতি উন্নয়নের তাগিদ দেন তিনি। একপর্যায়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সম্মত হয় মিয়ানমার।

ওই কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, স্বেচ্ছায় ও আলোচনার ভিত্তিতে এসব ক্যাম্পে বসবাসকারী ব্যক্তিদের নিজেদের গ্রাম বা আশপাশের সম্ভাব্য কোথাও পুনরায় বাসস্থান তৈরি করে দিতে হবে, যেখানে তারা জীবিকার সুযোগ পাবে।

তবে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ও মানবিক সংস্থাগুলোর বর্ণনা থেকে গার্ডিয়ান জানতে পেরেছে, আইডিপি ক্যাম্পগুলোতে রুদ্ধশ্বাস বাস্তবতা চলছে। সেখানে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ ও দুর্দশা অপরিবর্তিত রয়েছে। চলাফেরা, জীবিকা উপার্জনের সুযোগ প্রায় পুরোপুরিই অস্বীকার করা হয়েছে।

গত ৬ জুন মিয়ানমার সরকারকে লেখা চিঠিতে দেশটিতে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেছেন, এখন থেকে চলাফেরার স্বাধীনতাসহ মৌলিক ইস্যুতে বাস্তব উন্নতি হলেই কেবল জাতিসংঘ ও তাদের দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা সরবরাহ করা হবে।

মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আয়ে-কে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, পুরনো ‘বন্ধ থাকা’ এবং নতুন তৈরি করা ক্যাম্পগুলোতে একই অমর্যাদাকর পরিস্থিতি চলছে। সেখানকার বাসিন্দাদের মৌলিক সেবা বা জীবিকার সুযোগ নেই। এমনকি দৃশ্যত অপরিবর্তিত থেকে গেছে ক্যাম্পের অবস্থান।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে