উত্তাল বুয়েট, ১৬ দফা দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আজ বুধবার পঞ্চম দিনের মতো বুয়েট শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এদিন আন্দোলনকারীরা দলবদ্ধ হয়ে রেজিস্ট্রার ভবনে তালা লাগিয়ে দেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় পঞ্চম দিনের আন্দোলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১টায় বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সমাবেত হন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ভিসি ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।
তারা ‘প্রশাসনের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’; ‘প্রহসনের প্রশাসন মানি না, মানি না’; ‘স্বৈরাচারী প্রশাসন মানি না, মানবো না’; ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে না’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে’; ‘হৈ-হৈ, রৈ-রৈ ভিসি স্যার গেল কই’- স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন।
- আরও পড়ুন >> ৬ মাসের মধ্যে শাহজালালে আসছে নিরাপত্তা সরঞ্জাম
আন্দোলনের মুখপাত্র হাসান সারোয়ার সৈকত বলেন, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে বুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে। অধ্যাপক ডা. এ কে এম মাকসুদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমান ভিসির কর্মকাণ্ডে আমরা শিক্ষকরা সন্তুষ্ট নই। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তা যৌক্তিক। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে বুয়েট শিক্ষকরা সংহতি প্রকাশ করছেন।
এছাড়া বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও বুয়েট শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বলে দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তারা ভিসি ভবনের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে পলাশী সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে ১৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দাবি আদায়ে তারা টানা পাঁচদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বুয়েট ভিসির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বারবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে গত দুদিন আগে ভিসি ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর থেকে ভিসি স্যার আর ক্যাম্পাসে আসেননি।
এদিকে এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে শিক্ষকদের মাধ্যমে খবর পৌঁছে দিয়েছেন বুয়েট ভিসি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানতে রাজি নয়, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের ১৬ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ বাতিল, নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের সব লেনদেন ডিজিটাল করা, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, টার্ম পরীক্ষায় কোডিং সিস্টেম চালু, ছাত্রী হলকে সনি হল নামকরণ ইত্যাদি।
বুয়েট আন্দোলনের মুখপাত্র মেকানিক্যাল বিভাগ শেষ বর্ষের ছাত্র হাসান সরোয়ার সৈকত বলেন, দাবি আদায় ছাড়া আমরা ক্লাসে ফিরব না। আমরা পাঁচদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে এলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেয়া হয়নি। এ কারণে আমরা বাধ্য হয়েই বুধবার প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনকে বুয়েট শিক্ষক সমিতি সমর্থন জানিয়েছে। যৌক্তিক আন্দোলন বলেই তারা এতে সংহতি প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন সময়েও আমরা এসব দাবিতে আন্দোলন করেছি, আমাদের শুধু আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে এবার দৃশ্যমান বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে