রাজধানীতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কোনো বাড়ি আইনের বাইরে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, আমরা অনুসন্ধানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এক হাজার ৮১৮টি বাড়ি পেয়েছি। এসব বাড়ির মালিকরা রাজনীতি ও অর্থের দিক দিয়ে ক্ষমতাবান। আমি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলেছি। অবৈধ বাড়ির মালিক কোনো মন্ত্রী-এমপি হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। একটা বাড়িকেও আমরা আইনের বাইরে রাখতে চাই না।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকাতে অনেক বাড়ি রয়েছে, সেসব বাড়ি রিডেভেলপমেন্ট করে যার যতটুকু জমি তাকে ততটুকু ফ্ল্যাট থাকার জন্য দেওয়া হবে। আর যেসব ভবন কোনোভাবেই রাখা যাবে না তা ভেঙে ফেলা হবে। অন্যথায় সেসব ভবন সিলগালা করে দেওয়া হবে।
এসময় নিজ দফতরের অপরাধ, অনিয়ম বা দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করারও আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকেই বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যেন নিউজ না হয়, কিন্তু আমি বলি উল্টোটা। আমি ভিন্ন স্রোতে চলতে চাই। আমিসহ আমার অধীনস্ত বারোটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কিছু নিউজ না করলে, কোনো খবর তো পাবো না। অ্যাকশন নিতে হলে খবর পাওয়া দরকার।
তবে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে কারও মানহানি না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এসময় নিজের সফলতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এক সময় ঢাকার এফআর টাওয়ার নিয়ে তদন্ত শুরু করলাম। অনেকে পত্রিকায় লিখলেন, তদন্ত আলোর মুখ দেখবে না। কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং পরে তদন্ত প্রতিবেদন সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছিলাম। সে তদন্ত, আলোর মুখ দেখেছে। ৬২ জন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স। তাই সেই প্রশ্নে, ওই ৬২ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত সপ্তাহে আমরা রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয় টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ভবন ভাঙার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ভবন নির্মাণে রাজউক ও সিটি করপোরেশন চাইলে আমরা তাদের সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকেও দুর্ঘটনা মোকাবিলায় যথাযথ উপায়ে ভবন নির্মাণের বিষয়টি তদারক করতে বলেছি। এছাড়া চলতি বাজেট অধিবেশনের পর ডিটেইলস এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) বিষয়ে একটি রিভিউ করে তাদেরকে পুনরায় সুসংগঠিত করার কথা বলেছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার ঘটনার পর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আমি নিজেও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রেখেছিলাম। আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি এসব ঘটনার সৃষ্টি করেছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার না করার জন্য আইন করা হলো। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের জেলখানা থেকে বের করে দেওয়া হলো। সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নুর তাপসের বাবা-মাকে হত্যা করা হলো। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট জমা পড়লো না। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার পর তারা তিনবার ক্ষমতায় এলেও মামলার চার্জশিট জমা করতে পারেনি। তাই শুধু সারগর-রুনি নয় এমন আরও যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সব ঘটনার তদন্ত ও বিচার করা হোক।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি ইলিয়াস হোসেন।