বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষকে এই বার্তা পুলিশপ্রধানকে (আইজিপি) জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এই আদেশ দেন।
বরগুনায় স্ত্রীর সামনে স্বামীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে আসা খবর আজ সকালে আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস। এরপর এই ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না বা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আজ বেলা দুইটায় আদালতকে জানাতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আদালতকে বলেন, আদালতের মৌখিক নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা হয়েছে। সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত রিফাতের বাবা ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। চন্দন নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ সময় আদালত বলে, মূল অভিযুক্তকে কি গ্রেপ্তার করা হয়েছে? কলেজের সামনে দিনেদুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের কার্যক্রম তৎপর মনে হচ্ছে না।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আসামিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনটি টিম কাজ করছে। র্যাবও সঙ্গে যুক্ত আছে। আসামিদের বাড়ি ও তাদের স্বজনদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আসামিদের গ্রেপ্তার করে সোপর্দ করা হবে।
আদালত বলেন, বরগুনার পাশে পিরোজপুর জেলা আছে। এটি একটি উপকূলীয় এলাকা। এর আগে একটি মামলায় আসামি ধরার সময় উধাও হয়ে গেছেন। এ ক্ষেত্রে (রিফাত হত্যা) এমনটি হলে তা হবে দুঃখজনক। আসামিরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে, এ ব্যাপারে পুলিশপ্রধানকে জানিয়ে দিন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালত বলেন, আপনি আমাদের বিষয়টির অগ্রগতি জানাবেন। কোনো অনিয়ম দেখা দিলে আমরা তা নজরে রাখব।
- আরও পড়ুন, পুরনো ডিএজি-এএজিদের পদত্যাগের নির্দেশ
এ সময় আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস এ বিষয়ে আদালতকে আদেশ দেওয়ার আরজি জানান। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, নিহত রিফাতের স্ত্রীসহ পরিবারকে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বুধবার বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনে দিনদুপুরে স্ত্রী আয়েশার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নিহত রিফাত শরীফ সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দুলাল শরীফের ছেলে। অভিযোগ ওঠা যুবকদের মধ্যে নয়ন ও রিফাত ফরাজী নামের দু’জনের নাম বলতে পেরেছেন নিহত যুবকের বন্ধুরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রিফাত শরীফ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।