প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবর্তন আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ করেছেন। বিশেষ করে পুঁজিবাজারের স্টক লভ্যাংশ এবং রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত করারোপসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাজেটে যে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তা পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন তিনি।
আজ শনিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব প্রস্তাব দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাজেট পাসের আগে রাজস্ব অংশের আলোচিত-সমালোচিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রী তা সংশোধন করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। পরে অর্থমন্ত্রী তা সংশোধন করে নিলে অর্থবিল সংসদে পাস হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ডে উৎসাহিত করার জন্য স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারে না।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এ রূপ মন্তব্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ আমাদের ভাবতে হবে। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীও নগদ লভ্যাংশ প্রত্যাশা করে।
তাই নতুন প্রস্তাবে স্টক ডিভিডেন্ডের সঙ্গে সমান হারে নগদ লভ্যাংশও দেয়ার প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদ নেতা বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমি প্রস্তাব করছি যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশে ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রস্তাব করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নগদ লভ্যাংশ উৎসাহিত করায় আমরা আরও প্রস্তাব করেছিলাম যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভ থাকলে অতিরিক্ত রিটেইন আর্নিং, রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে। এ বিষয়েও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা কেউ কেউ আপত্তি করেছেন।
সংসদ নেতা বলেন, সেই প্রেক্ষাপটে এই ধারাটির আংশিক সংশোধনপূর্বক আমি প্রস্তাব করছি যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে কর-পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে।
তিনি বলেন, যদি কোনো কোম্পানি এ-রূপ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতি বছর রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে করারোপ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, উপরোক্ত বিষয়গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত আয়কর আইনের প্রস্তাবিত ধারাগুলো আমরা বিবেচনা করব।
ভ্যাটের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৫ শতাংশের নিম্নহারের উপকরণ কর রেয়াত দেয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছে।
- প্রতিদিন শরণার্থী শিশু মারা যাচ্ছে : জাতিসংঘ
- প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিল উত্থাপন
- কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে চিলি
তিনি বলেন, হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ কর দিয়ে রেয়াত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে আইনে সেই বিধান আনার প্রস্তাব করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ, প্রণোদনা প্রদানে প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শুল্কহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে এর ফলে দেশীয় কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রণশিল্পের প্রণোদনা প্রদান ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধকল্পে দেশে উৎপন্ন হয় না এমন পেপারগুলোর শুল্কহার যৌক্তিক করা হবে।
এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে শুল্কহার পুনর্নিধারণ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।