গ্রামীণফোনকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা দিতেই হবে

ডেস্ক রিপোর্ট

সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা দিতেই হবে গ্রামীণফোনকে
ফাইল ছবি

গ্রামীণফোনকে সরকারের পাওনা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা দিতেই হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দাবি করা এই টাকা দীর্ঘদিন ধরে না দিয়ে তালবাহানা করে আসছিল গ্রামীণফোন। টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবার কড়া পদক্ষেপ নিল।

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গতকাল বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে ৩০ ভাগ ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামীণফোনের।

গতকাল বিকেল ৫টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। একইভাবে রবির কাছে পাওনা ৮৬৭ কোটি টাকা। তাদেরও ব্যান্ডউইথ ১৫ ভাগ কমানো হয়েছে। বিটিআরসির এই পদক্ষেপের ফলে গ্রামীণফোন গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়বেন। ইন্টরনেটের গতি অনেক কমে যাবে। বেড়ে যাবে কল ড্রপও।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এত দিন তাদের কাছে টাকা পরিশোধের তাগাদা দিয়ে আসছিলাম, কিন্তু তারা কিছুই করেনি। সরকারি টাকা উদ্ধারে আমাদের আর কিছুই করার ছিল না।’ গ্রাহকদের ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এতে গ্রাহকদের একটু ভোগান্তি হতেই পারে। কিন্তু আমরাও তো নিরুপায় হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারা টাকা দিয়ে দিক, তাহলে তো সমস্যা নেই।’

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই অপারেটরের কাছে বিটিআরসি ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনার দাবি করে আসছিল। যদিও নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে অপারেটররা প্রশ্ন তুলে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে অপারেটরদের চিঠি চালাচালির মধ্যে এই কড়া পদক্ষেপ নিল বিটিআরসি।

গ্রামীণফোন বলছে, তারা আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান চেয়েছিল। কিন্তু এই চিঠি সেই পথ রুদ্ধ করে দিল। আর রবির চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, ‘বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মোবাইল ফোন গ্রাহক নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হবে। এখন আমরা আমাদের এই সীমিত ব্যান্ডউইথ দিয়ে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

গ্রামীণফোনের সার্ভিসে সাধারণ গ্রাহকরা এমনিতেই বিরক্ত। তাদের সেবার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। খোদ ঢাকা শহরেই ফোরজি সার্ভিস পাওয়া যায় না। ইন্টারনেট একবার যাই একবার আসে। কখনো কখনো টুজিও হয়ে যায়। আর কলড্রপের অবস্থা তো আরো খারাপ। একটি কলে টানা ৫ মিনিটও কথা বলা যায় না। এখন নতুন করে বিরক্তি যোগ হয়েছে যে কারো সঙ্গে কথা বলার মধ্যে গান বেজে ওঠে। কল সেটআপ (নম্বর ডায়াল করার পর আরেকটি ফোনে ঢুকতে যে সময় লাগে) টাইমও বেশি গ্রামীণফোনের। এখন ৩০ ভাগ ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার ফলে গ্রাহকদের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিটিআরসি গতকাল লেভেল-৩ ক্যারিয়ার লিমিটেড, ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস, সামিট কমিউনিকেশন, আমরা টেকনোলজি ও ফাইবার অ্যাট হোম গ্লোবাল লিমিটেড, গ্রামীণফোন ও রবিকে ব্যান্ডউইথ সীমিত করার নির্দেশ দেয়। এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ বাড়ানো যাবে না। ব্যান্ডউইথ সরবরাহকারী ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েকে (আইআইজি) পাঠানো চিঠিতে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও গ্রামীণফোন ও রবি সরকারের পাওনা অর্থ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

গ্রামীণফোনের কাছে যে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি করা হয়েছে, তার মধ্যে বিটিআরসির পাওনা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ টাকা এবং এনবিআরের পাওনা ৪ হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এর মধ্যে একজনের মোবাইল ফোন নম্বর তার অজান্তেই আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে গ্রামীণফোনকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি। এছাড়া সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা এসএমপির অংশ হিসেবে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে আরো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বিটিআরসি। অন্য অপারেটরদের যেখানে সর্বনিম্ন কলরেট ৪৫ পয়সা, সেখানে গ্রামীণফোনের সর্বনিম্ন কলরেট হবে ৫০ পয়সা। আন্তসংযোগ ফি (এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটর) অন্য অপারেটরদের ১০ পয়সা। সেখানে গ্রামীণফোনকে দিতে হবে ১৫ পয়সা। এমনকি অন্য অপারেটরদের প্যাকেজের অনুমোদন নিতে না হলেও গ্রামীণফোনকে এখন থেকে সব প্যাকেজ অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে বিটিআরসি থেকে। মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটির (এমএনপি) ক্ষেত্রে যে কোনো অপারেটরে গেলে ৯০ দিন সেখানে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক ৬০ দিনের মধ্যেই গ্রামীণফোন ছাড়তে পারবেন।

এর বাইরেও গ্রামীণফোন ও রবির বিরুদ্ধে আরো কিছু কড়া পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, এরপরও যদি তারা টাকা পরিশোধ না করে, তাহলে পর্যায়ক্রমে আরো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে। তার মধ্যে আছে—এ দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অনাপত্তি বা অনুমোদনপত্র জারি বন্ধ করে দেওয়া। এতে প্রতিষ্ঠান দুটির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এমএনপি পোর্ট ইন বন্ধ বা সীমিত করার পরিকল্পনাও হাতে রাখা হয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট অপারেটর তাদের নেটওয়ার্কে পোর্ট ইন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না বা এই সুবিধা সীমিত হয়ে পড়বে।

এর চেয়েও কড়া পদক্ষেপ হতে পারে, নতুন গ্রাহক নেওয়া বন্ধ বা সীমিত করে দেওয়া। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ প্রান্ত থেকে অন্তর্গামী বা বহির্গামী কল বন্ধ বা সীমিতকরণের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এছাড়া নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা এসএমএসের মাধ্যমে সারা দেশ বা নির্দিষ্ট এলাকায় থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে