রপ্তানির তালিকায় যুক্ত হচ্ছে সুপারিগাছের খোলে তৈরি প্লেট-বাটি

বিশেষ প্রতিনিধি

ছবি : সংগৃহিত

সুপারিগাছের খোল কুড়িয়ে গ্রামাঞ্চলে সচরাচর নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে এবার অপ্রচলিত এই কৃষিপণ্যটি নিয়ে একটু ব্যতিক্রমী কাজ শুরু হয়েছে।

জানা যায়, দুটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এই খোল ব্যবহার করে তৈরি করছে পরিবেশবান্ধব থালা-বাটি। পরিবেশবান্ধব এই পণ্যগুলো শুকনো খাবার পরিবেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। যার প্রচুর চাহিদা রয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে।

universel cardiac hospital

স্থানীয় বাজারে পণ্যগুলো স্বল্প পরিসরে বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে মূল লক্ষ্য বিদেশে রপ্তানি করার। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

বাগেরহাটে বিসিক শিল্প নগরীতে ব্রাইট এরিকা ও ন্যাচারাল ফাইবারস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে। সুপারি একটি অর্থকরী ফসল হলেও সুপারিগাছের খোল কোনো অর্থকরী ফসল নয়। আর এই খোল থেকেই প্লেট, বাটি, পিরিচের মতো কয়েকটি পণ্য তৈরি করছে ব্রাইট এরিকা।

নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহার করে প্লেট, ফুড কনটেইনার তৈরি করে ন্যাচারাল ফাইবারস। উদ্যোক্তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো এই পণ্যগুলোকে রপ্তানি করা। দ্রুত পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিভিন্ন দেশেই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

জানা যায়, জাপান, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে এ ধরনের পণ্যের চাহিদা রয়েছে।

ব্রাইট এরিকা সুপারিগাছের খোলের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করছে। এর জন্য বাগেরহাট, পিরোজপুর, ভোলা, কক্সবাজার, বরিশালসহ কয়েকটি জায়গা থেকে খোল সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিবেশী দেশ ভারত নিয়মিত এসব দেশে এ ধরনের পণ্য রপ্তানি করে আসছে। ভারতে এ ধরনের ১০০টির বেশি কম্পানি রয়েছে, যারা সুপারিগাছের খোলসহ বিভিন্ন পাতা ব্যবহার করে এসব পণ্য উৎপন্ন করছে এবং রপ্তানি করছে।

বর্তমানে একটি কম্পানি সুপারিগাছের খোল থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার পিস প্লেট-বাটি উৎপন্ন করছে, যা দেশের বিভিন্ন সুপারশপে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বড় হোটেলগুলোও এই পণ্যগুলো নিচ্ছে।

ব্রাইট এরিকার চিফ অপারেটিং অফিসার মো. ইমরান হোসেন প্রথমে এ পণ্যটি বাংলাদেশে তৈরি করা শুরু করেন। ব্যতিক্রমী কিছু করার চিন্তা থেকেই এ ধরনের কাজ করছেন তিনি। তার প্রস্তুতি চলছে কারখানা সম্প্রসারণ করে উৎপাদন বাড়ানোর। দ্রুতই প্রতিষ্ঠানটি এই পণ্যগুলো রপ্তানি করতে পারবে বলেও আশাবাদী তিনি।

ইমরান হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দ্রুত রপ্তানিতে যেতে চাই। এ জন্য কারখানা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। প্রতিযোগিতার বাজারে রপ্তানির জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ ভারতে যারা রপ্তানি করছে তারা ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রপ্তানি প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছে। যার বিপরীতে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনও সুপারিশ করবে রপ্তানিতে প্রণোদনার জন্য। রপ্তানি প্রণোদনা প্রদত্ত পণ্যের (রপ্তানি সম্ভাবনাময় খাতের পণ্যসহ) তালিকা পুনর্মূল্যায়নের নিমিত্তে গঠিত রিভিউ কমিটির এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

জানা যায়, আলোচনা শেষে ট্যারিফ কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা প্রদান করার জন্য সুপারিশ করা হবে। ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানই এখনো পণ্যগুলো রপ্তানি করেনি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে