সারাদেশে ধর্ষণ, কুপিয়ে হত্যা, মব কিলিং বা গণপিটুনিতে মানুষ হত্যার মতো অপরাধ সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন নারী-পুরুষ, যার ফলে অকালেই ঝরে পড়েছে অনেক মূল্যবান প্রাণ। ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে সন্তানের অভিভাবক সবাই এ ধরনের নির্মম পিটুনি ও হত্যার শিকার হচ্ছেন।
প্রায় এক মাস ধরে এ ধরনের গুজবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে।
উদ্বেগের বিষয়, খোদ রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানকে ভর্তি করাতে যাওয়া তাসলিমা বেগম রেনু নামের এক মা’কে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনি দেয়া হয়। পরে পুলিশ ঐ মা’কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত মানুষের তত্ত্বাবধানে যদি এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে, তবে আমাদের সমাজ কত কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও গুজবে বিশ্বাসী, তা চিন্তা করে শিউরে উঠতে হয়।
- আরও পড়ুন >> জনাব আহমদ শফিদের চিন্তাধারা মধ্যযুগীয়
সংবাদপত্র ,অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলায় ধর্ষণ, কুপিয়ে হত্যাসহ নানান অপরাধের খবর ভাইরাল হচ্ছে। এসব অপরাধের উৎসাহদানের ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু কিছু সদস্যদের সম্পৃক্ততার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ করে অপরাধ প্রবণতার উচ্চ হার জনমনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানোর ফলে এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা বেড়েই চলেছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
মূলত, আইনের প্রতি আস্থাহীনতা, গুজবে কান দেয়া এবং নৈতিক-সামাজিক অবক্ষয় থেকে মানুষ জীবিত আরেকজন মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে কিংবা কুপিয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজ করতে পারে। এ অবস্থায় যে কোনো গুজবে কান দিয়ে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা বন্ধ করার জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
- আরও পড়ুন >> নদী দখলকারীরা খুনিদের মতো অপরাধী
অপরিচিত কোনো নারী-পুরুষকে কোনো কারণে সন্দেহ হলে তাকে আটকে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়াই সচেতন নাগরিকদের দায়িত্ব। এ বিষয়ে অবিলম্বে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, গণপিটুনি ফৌজদারি অপরাধ।
সাারাদেশে ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার বিষয়টিও মহামারি আকার ধারণ করেছে। মূলত সামাজিক নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই এটির হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব অপরাধ বন্ধে আমাদেরকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি নিজেদের কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা পরিহার এবং রাষ্ট্রীয় আইনের যথার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অপরাধীই যেন প্রভাব খাটিয়ে রক্ষা পেতে না পারে সেদিকে রাষ্ট্রকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। অপরাধী এমপি, মন্ত্রী, উধ্বর্তন কর্মকর্তা কিংবা তাদের সন্তান বা আত্মীয় যেই হোন না কেন তাঁরা যেন তাদের নিজেদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে পারে তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। অন্যাথায় রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা শিকল ভেঙে পড়বে এবং জনগণও বেপরোয়া হয়ে উঠবে; যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।