আমাদের দরকার পানি, বিশুদ্ধ পানি : হাইকোর্ট

বিশেষ প্রতিবেদক

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

‘তারা (ওয়াসা) যদি সমস্যার সমাধান করতে পারে, তাহলে ভালো। আমাদের দরকার পানি, বিশুদ্ধ পানি। আমরা অতশত বুঝি না, বিশুদ্ধ পানি চাই। এটি নিশ্চিত করতে পারলে ভালো।’

ওয়াসার দূষিত পানির বিষয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর শুনানিকালে বুধবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে ওয়াসার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাসুম। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

এর আগে পানি পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদন গত ৭ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেই প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের পানিতেই ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। আদালত এ প্রতিবেদন সম্পর্কে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চেয়ে বুধবার শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছিলেন।

শুনানিকালে ওয়াসার আইনজীবী এএম মাসুম বলেন, সমন্বিত পানি পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নমুনায় ফেকাল কলির্ফম পাওয়া গেছে। সেই প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ ছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন করছি। ওই সুপারিশ অনুসারে আইসিসিডিআরবি ও বুয়েটে আমাদের পানি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। পাতলাখান লেনের পানির রিপোর্ট পেয়েছি। মিরপুরেরটা আগামী রোববার পাবো।

তখন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, আদালতের আদেশের পরে পানি পরীক্ষার জন্য কমিটি গঠন করতে তিন মাস সময় লেগেছিল। আজকে প্রতিবেদনের ওপর জবাব দাখিলের কথা ছিল।

এএম মাছুম বলেন, একটা প্রতিবেদন হাতে এসেছে। মিরপুরেরটা রবিবার আসবে। আসলে প্রতিবেদন দিয়ে দেবো।

এ সময় আদালত ওয়াসার আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, তারা (ওয়াসা) যদি সমস্যার সমাধান করতে পারে, তাহলে ভালো। আমাদের দরকার পানি, বিশুদ্ধ পানি। আমরা বিশুদ্ধ পানি চাই। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভালো।

এরপর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ জুলাই দিন ধার্য করেন।

পরে এএম মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, সমন্বিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের পানিতেই ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ পাওয়া গেছে। এছাড়া, কমিটি ঢাকা ওয়াসার ১০টি বিতরণ জোনের বিভিন্ন এলাকা থেকে দৈবচয়ন ও দূষণের অভিযোগ রয়েছে এমন ৩৪টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে আটটি নমুনায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ পাওয়া গেছে। এছাড়া, বিতরণ জোন-১ এর পুরান ঢাকার পাতলাখান লেন, জোন ৪-এর মিরপুরের কাজীপাড়া ও বিতরণ জোন-৭ এর শনির আখড়া, ধনিয়া থেকে সংগ্রহ করা পানিতে কলিফর্ম পাওয়া গেছে।

এর আগে গত ১৬ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পানি পরীক্ষা বিষয়ক একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার লিংকে (হটলাইন) গত তিন মাসে ময়লা পানির অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে ১০টি জোনের ৫৯ এলাকায় ময়লা পানির প্রবণতা বেশি বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৪ মে পানি পরীক্ষা কমিটির তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআরবির ল্যাবে পানির বিভিন্ন প্যারামিটারের মূল্যহার একীভূত করে মোট বাজেট সংযুক্ত করা হয়।

বাজেটে বলা হয়, এই ১০টি জোনের প্রত্যেক এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ফলে মোট নমুনার সংখ্যা দাঁড়াবে ১০৬৫টি। এই ১০৬৫টি নমুনা করে তিনটি ল্যাবরেটরিতে রোগজীবাণু ও ভৌত রাসায়নিক সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে মোট ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা।

এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে মতামত শুনতে ওই কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট) চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমানকে আদালতে ব্যাখ্যা দেওয়া নির্দেশ দেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে