ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে দাবি উঠেছে ক্যাম্পাস বন্ধের। তবে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা না করলেও ডেঙ্গু রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের দুই সদস্য। ফলে ডেঙ্গুর ভয়ে ভীত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই।
গতকাল শুক্রবার রাতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবির স্বাধীনের। ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের ২০তম ব্যাচের মাস্টার্সের এ ছাত্রের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলায়। থাকতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে।
এর পাঁচদিন আগে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সায়েম হাসান টিটু নামের এক কর্মচারী। কার্জন হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকতেন তিনি।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর একটি ফেসবুক গ্রুপ ‘স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ -এ ডেঙ্গু আক্রান্তদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই একটি ফেসবুক গ্রুপেই শতাধিক শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে ফজলুল হক মুসলিম হলে ১১ জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ১২ জন, কবি জসীমউদদিন হলে ৪ জন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ১৪ জন, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৯ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বারান্দায় থাকা ৫ জন, অমর একুশে হলে একজন, জগন্নাথ হলে ৫ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৮ জন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ৫ জন, স্যার এএফ রহমান হলে একজন এবং বিজয় ৭১ হলের ১৪ জন রয়েছেন।
অন্যদিকে মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে- ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে একজন, শামসুন নাহার হলে ২ জন এবং সুফিয়া কামাল হলে ৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। তবে এই সংখ্যা ২০০ এর কাছাকাছি এবং তা আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বিভিন্ন হলে ডেঙ্গু আক্রান্তদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অপরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস, নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধ না দেয়া, হলগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের গাফলতি এ অবস্থার প্রধান কারণ।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদারকির অভাব রয়েছে বলে মনে করেন তারা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু পুরো ক্যাম্পাসে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। তাই ক্যাম্পাসে জরুরী অবস্থা জারি করে ঈদের ছুটির সাথে মিলিয়ে সাধারন ছুটি ঘোষণারও দাবিও তাদের।
এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুক্রবার বিকালে একযোগে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে মশার ওষুধ দেয়া হয়েছে। হল সংসদগুলো ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার কর্তৃপক্ষ জানান, সেখানে দৈনিক শতাধিক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা তাদের রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকেই বাইরের মেডিকেলে গিয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন।
এ অবস্থায় আগামী রোববার থেকে ডেঙ্গুর পরীক্ষা নিরীক্ষা সহজ করতে নতুন মেশিন স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু রোগের জন্য যাতে শিক্ষার্থীরা ভালভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারে সেজন্য আমাদের মেডিকেল সেন্টারে একটা নতুন মেশিন কেনা হয়েছে।
‘আগামীকালই (রোববার) এই মেশিন বসবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে যাতে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরণের বিড়ম্বনা না হয় সেজন্য মেডিকেল সেন্টারকে সব ধরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনকেও সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া হল প্রাধ্যক্ষদেরকে তাদের স্ব স্ব হলগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’