বাসচাপায় পা হারানো রাসেলকে ৫ লাখ টাকার চেক দিল গ্রিন লাইন

গ্রিন লাইন
বাসচাপায় পা হারানো রাসেলকে ৫ লাখ টাকার চেক দিল গ্রিন লাইন

বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকার মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।

সোমবার হাইকোর্টের মাধ্যমে রাসেলের হাতে চেক তুলে দেন গ্রীনলাইনের আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায়।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ সোমবার এ বিষয়ে শুনানি হয়।

শুনানিকালে আদালত বলেছেন, ‘মাসিক কিস্তির অর্থ পরিশোধের আদেশ বহাল থাকবে। টাকা পরিশোধ করে যাবেন।’ আগামী ১৭ অক্টোবর আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।

এর আগে ২১ জুলাই গ্রিন লাইনের পক্ষে নতুন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হকের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুলাই শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছিলেন হাইকোর্ট। ধার্য তারিখে ওই আইনজীবীর অসুস্থতার কথা জানিয়ে একদিনের সময় চান আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

এ দিন গ্রিন লাইনের পক্ষে পলাশ চন্দ্র রায়, অন্যদিকে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন ও সরদার জাকির হোসেন।

আজ সকালে ক্রাচে ভর দিয়ে আদালতে উপস্থিত হন রাসেল সরকার। শুনানির শুরুতে আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায় জানান, ‘৫ লাখ টাকার চেক আনা হয়েছে। এটি গ্রহণ করা হলে আমরা আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে পারি।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘রাসেল এসেছে?’ এ সময় ক্রাচে ভর দিয়ে ডায়েসের সামনে এসে দাঁড়ান রাসেল সরকার। তখন রাসেল সরকারের হাতে চেক তুলে দেওয়া হয়। আদালত বলেন, ‘কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের আগের আদেশ বলবৎ থাকবে।’

তখন পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, আদালত ২৫ জুন কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের আদেশ দিয়েছিলেন। কিস্তিতে ৪৫ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছিল। এই অর্থ কমানোর জন্য ১৭ জুলাই চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত স্থগিতাদেশ দেননি। তবে আবেদনটি ১৩ অক্টোবর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।

এ সময় আদালত বলেন, ‘ইতিমধ্যে তাঁর (রাসেল) প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।’ তখন আইনজীবী জহির উদ্দিন বলেন, ‘তাঁর (রাসেল) পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে, পানি পড়ছে।’

আদালত বলেন, ‘আমাদের আদেশে স্থগিতাদেশ নেই। স্থগিতাদেশ থাকলে ভিন্ন কথা। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করবেন। কিস্তিতে মাসিক অর্থ পরিশোধের আদেশ বহাল আছে। টাকা দিয়ে যাবেন। যদি আদেশ স্থগিত না হয়, তাহলে অর্থ পরিশোধ চালিয়ে যেতে হবে। কেননা, কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের বিরুদ্ধে আপনারা আপিল বিভাগে যাননি। তবে সর্বোচ্চ আদালত অর্থ কমিয়ে দিলে অন্য কথা।’

এ সময় আদালত গ্রিন লাইনের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘চেকটি কত তারিখের জন্য?’ তখন পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘৭ আগস্ট তারিখ উল্লেখ রয়েছে।’ আদালত জানতে চান, ‘তাহলে কি তিনি ঈদের আগে চেক ভাঙাতে পারবে?’ পলাশ চন্দ্র রায় উত্তরে জানান, ‘পারবে।’ তখন আদালত বলেন, ‘প্রতি মাসে কিস্তি দেওয়ার কথা। তাহলে আপনি আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন।’ পরে আদালত ১৭ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের দিন রাখেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম, বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. রাফিউল ইসলাম।

উল্লেখ্য, রাসেল একটি প্রতিষ্ঠানের ভাড়া গাড়ি চালাতেন। গত বছরের ২৮ এপ্রিল কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর হানিফ উড়ালসড়কে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের চাপায় পা হারান তিনি।

রাসেলের পা হারানোর ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম হাইকোর্টে রিট করেন।

এর ধারাবাহিকতায় গত মার্চে হাইকোর্ট এক আদেশে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে এবং প্রয়োজন হলে তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার এবং কাটা পড়া বাঁ পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর জন্য খরচ বহন করতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

গত ১০ এপ্রিল গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ রাসেলকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দেয়।

সবশেষ গ্রিন লাইনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুন হাইকোর্ট বাকি ৪৫ লাখ টাকা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে নির্দেশ দেন। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে রাসেলকে পাঁচ লাখ টাকা করে ওই অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়।

অর্থ পরিশোধ বিষয়ক তথ্য প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আদালতকে জানাতেও বলা হয়। এ অবস্থায় প্রথম কিস্তির ওই অর্থ আজ রাসেলকে দেওয়া হলো।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে