ডেঙ্গু নিয়ে ‘বালখিল্য’ মন্তব্য নয়, প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ

মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

সারাদেশ জুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ এতটাই বেড়েছে যে, পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বললেও কম হবে। রোগীর ভারে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তির মিছিল।

এই ভয়াবহ আকার ধারনের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে দায়ী করা হচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশনকে। তারা যথাসময়ে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে হয়তো বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তারা সেই পদক্ষেপ নেননি, বরং যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তা কার্যকরী নয়। বিষয়টিতে প্রশ্ন তুলেছেন উচ্চ আদালতও।

ওষুধ কার্যকরী কিনা, তা আগে কেন পরীক্ষা করা হয়নি, তা-ও জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত। আশ্চর্যই বলতে হবে, ডেঙ্গু যখন মহামারীর আকার ধারণ করতে যাচ্ছে এবং ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছে দেশবাসী তখন বিষয়টি নিয়ে নানা ‘বালখিল্য’ মন্তব্য  করে যাচ্ছেন সরকার ও বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিরা। রীতিমতো যেন প্রতিযোগিতা চলছে কে কাকে ছাড়িয়ে যাবেন। বিষয়ের গুরুত্ব কতটুকু, এসব বিবেচনায় না নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে যাচ্ছেন তারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ডেঙ্গু নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছেন। একবার বললেন, মশা অনেক শক্তিশালী। মশা মারার ওষুধে এই কারণেই কাজ হচ্ছে না। কখনো বলছেন, রোগীরা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাচ্ছেন না। সর্বশেষ বললেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে নাকি ছেলেধরার গুজবের মতোই গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ‘ছেলেধরা’ বিষয়টি প্রকৃতই গুজব; আর ডেঙ্গু কোনো গুজব নয়। এই দুইয়ের প্রভেদ করতে তিনি পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছেন বলে অনেকেই মত প্রকাশ করছেন। তার এই বক্তব্য একটি গুরুতর বিষয়ের প্রতি তামাশা করার শামিল বলেও মনে করেন অনেকে। বস্তুত ডেঙ্গু দমনে দুই সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতি অস্বীকার করা যায় না।

এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে আরও ভয়ংকর মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন নাকি রোহিঙ্গাদের মতোই। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রজনন হার অনেক বেশি। এডিস মশাও রোহিঙ্গাদের মতোই বংশ বিস্তার করছে। তাঁর এই বক্তব্যে কার্যত বর্ণবাদী আচরণেরই প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ভার অন্যে ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকেই এই ধরনের বক্তব্য রেখেছেন বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন।

মূলত: ডেঙ্গু সারাদেশে মহামারি আকার ধারণ করার পূর্বে এটিকে প্রতিরোধে শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দুই সিটি করপোরেশন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগটি গ্রহণ করা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি।কারণ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে এর দায়ভার প্রথমে তাদের ওপরই বর্তায়। তাঁরা কোনোভাবেই এর দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারেন না।

ঢাকায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে এটিই হলো বাস্তবতা। এখানে ‘ছেলেধরা’ কিংবা ‘এডিস মশার প্রজনন রোহিঙ্গাদের মতো’ বলে এই বাস্তবতা এবং নিজেদের দায়িত্বকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ডেঙ্গুর আক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে মেয়র, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সকল সচেতন নাগরিককেও এগিয়ে আসতে হবে।

একই সঙ্গে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিকে আরও জোরদার করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের ওষুধের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না, প্রত্যেক নাগরিকের উচিত হবে স্ব স্ব বাড়িঘরের আশপাশে এডিসের প্রজনন হতে পারে এমন সব গ্রাউন্ডকে ধ্বংস করা। দিনের বেলায় অন্তত শিশুদের ঘুমের সময় মশারি ব্যবহার করাও সব অভিভাবকের দায়িত্ব। সবদিক বিবেচনা করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা তথা দেশবাসীকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে