জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের কৃতি খেলোয়াড় শামীমার বাবা সলেমান শেখ। জাতীয় পরিচয়পত্রে সলেমান শেখের বয়স এখন ৭৪ বছর। নারী নির্যাতন মামলার স্বার্থে সে বয়স কমিয়ে এজাহারে দেওয়া হয়েছে ৫৮ বছর। অন্যদিকে বিরোধের কারণ পাওনা টাকা। কিন্তু সেটিকে পাশ কাটিয়ে একজন নারীকে কটুক্তি করাসহ স্পর্শকাতর অনেক বিষয়কে মুখ্য করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এসব অভিযোগে বৃদ্ধ বয়সে সলেমান শেখকে যেতে হয়েছে জেলে। তাদের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামে।
শামীমা বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা রয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘কী হবে দেশের জন্য ক্রিকেট খেলে? যদি আমার মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ বাবাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়?’ এ ধরনের পোস্ট দেওয়ার পর বিষয়টির তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ সব তথ্য।
সলেমান শেখের ছোট ভাই মহম্মদ আলী অভিযোগ করেন- ক্রিকেটার শামীমার বাবা সলেমান শেখ নিজ গ্রাম কমলাপুরে গরুর খামারের পাশাপাশি গরুর খাবারের ব্যবসা করেন। তিনি তার প্রতিবেশী ঝিনাইদহ জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্য মফিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের কাছে বাকিতে কিছু গরুর খাবার বিক্রি করেন। ওই টাকা দিতে আনোয়ারা বেগম টালবাহানা করলে গত ২২ জুলাই সোমবার তিনি আনোয়ারার কাছে ওই টাকা চাইতে যান। এ সময় আনোয়ারার ছেলে আশিকুর রহমান তাকে মারপিট করে।
অন্যদিকে বৃদ্ধ সলেমান শেখের ওপর হামলার খবরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী একইদিন আশিকুর রহমানকে মারপিট করে। এ ঘটনার পাঁচদিন পর আনোয়ারা বেগম ও তার স্বামী পুলিশের সিপাহী মফিদুল ইসলাম শনিবার শ্রীপুর থানায় সলেমান শেখকে প্রধান আসামি করে নারী নির্যাতন ও সন্ত্রাস আইনে এজাহার দেন। এজাহারে সলেমান শেখের বয়স কমিয়ে ৫৮ বছর দেখানোসহ তাকে প্রধান আসামি করে তার বিরুদ্ধে আনোয়ারা বেগমকে কটুক্তিসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। শ্রীপুর থানা পুলিশ যথাযথ তদন্ত ছাড়াই এটিকে মামলা হিসাবে রজ্জু করে শনিবার সলেমান শেখকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা সিফাতুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, একজন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা মামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এলাকাবাসী এটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
অন্যদিকে কৃতি ক্রিকেটার শামীমা সুলতানা ফেসবুকের ইনবক্সে অভিযোগ করেছেন, প্রতিবেশী পুলিশ সদস্যের ওই পরিবারটি আমার বাবাসহ আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমার বৃদ্ধ বাবাকে বয়স কম দেখিয়ে তারা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটাচ্ছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হেনস্তা করছে।
শামীমা বলেছেন, পুলিশ সুপারকে আমি ফোনে ঘটনাটি জানিয়ে উপযুক্ত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। তবু মামলাটি কীভাবে রজ্জু হলো বুঝতে পারলাম না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটি নেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বাদি আনোয়ারা বেগম সলেমান শেখের চারিত্রিক বিষয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন।
এদিকে মামলার বাদি আনোয়ারা বেগম গতকাল সোমবার এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে বলেন, সলেমান শেখ খুব খারাপ একজন মানুষ। মাত্র ১২৮ টাকার জন্য সে আমাকে খুব খারাপ খারাপ কথা বলেছে। আমার স্বামী আমাকে বলেছে ওকে মার্ডার করে ফেলা উচিত ছিল।