বিশ্বের সর্ববৃহৎ বৃহত্তম বেসরকারি অলাভজনক উন্নয়নমূলক সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপার্সন পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। ফজলে হাসান আবেদের বিদায়ে ব্র্যাকের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারপারসনের পদে আসছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।
তবে ফজলে হাসান আবেদ ‘অ্যামিরেটাস চেয়ারপারসন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে থাকবেন। একই সঙ্গে গভর্নিং বোর্ডের আরও ৭ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের পরিচালনা পর্ষদেও।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে এক নৈশভোজ অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ব্র্যাকের মিডিয়া অ্যান্ড এক্সটার্নাল রিলেশন্স বিভাগের প্রধান রাজীব ভৌমিক গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ব্র্যাকের বিদায়ী পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন মুশতাক চৌধুরী, তাহেরুন্নেসা আবদুল্লাহ, লতিফুর রহমান, রোকিয়া আফজাল রহমান, লুভা নাহিদ চৌধুরী, মার্থা আলটার চেন, আদিব এইচ খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সৈয়দ এস কায়সার কবির।
ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের বিদায়ী পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন সিলভিয়া বোরেন, শাবানা আজমী, দেবপ্রিয় ভট্টচার্য্য, শফিকুল হাসান কায়েস, আইরিন জুবাইদা খান, পারভিন মাহমুদা, মুশতাক চৌধুরী, ফওজিয়া রশিদ, ভিক্টোরিয়া সেকিটোলেকো ও মারিলো ফন গোলস্টেইন।
সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুবুল হক পুরস্কার এবং গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার লাভ করেন। দারিদ্র বিমোচন এবং দরিদ্রের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুডে ভূষিত করে।
১৯৭০ সালে ফজলে হাসান আবেদ বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত দুঃস্থ মানুষের সাহায্যে ত্রাণ কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরে আসেন।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্র্যাকের জন্ম। যুদ্ধের পর সিলেটের শাল্লায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসবাসরত লোকজনকে দেখতে গেলেন। সেখানে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি শাল্লায় কাজ করবেন। এভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের দরিদ্র, অসহায়, সবহারানো মানুষের ত্রাণ ও পুনর্বাসনকল্পে শুরু করলেন ‘Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee’ সংক্ষেপে যা ‘BRAC’ নামে পরিচিত।
১৯৭৩ সালে সাময়িক ত্রাণ কার্যক্রমের গণ্ডি পেরিয়ে ব্র্যাক যখন উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে, তখন ‘BRAC’-এই শব্দসংক্ষেপটির যে ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হয়, সেটি হল ‘Bangladesh Rural Advancement Committee’। বর্তমানে ব্যাখ্যামূলক কোনো শব্দসমষ্টির অপেক্ষা না রেখে এই সংস্থা শুধুই ‘BRAC’ নামে পরিচিত।
কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবীর, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এস আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ, এই সাতজনকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হলো।
বোর্ড ফজলে হাসান আবেদকে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলেন ব্র্যাকের প্রথম চেয়ারম্যান। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাকের চেয়ারপারসন পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
- কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন কোকোর স্ত্রী
- দুর্নীতির অভিযোগে সিইসিসহ কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি টিআইবির
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলাসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকার ১২টি দেশে এটির কার্যক্রম রয়েছে। ব্র্যাক এর দাবি অনুযায়ী বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানে এক লক্ষের মতো কর্মী কাজ করে থাকেন। তবে এদের মধ্যে ৭০ ভাগই নারী কর্মী। ব্র্যাকের পরিসেবার আওতায় আছে ১২৬ মিলিয়ন লোক।