কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনুন: এইচআরডব্লিউ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছে কাশ্মীর।
এক সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছে কাশ্মীর। ছবি: এএফপি

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর যেন আবার অগ্নিগর্ভ হয়ে না ওঠে, তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

আর এ জন্য ভূস্বর্গ বলে বিবেচিত কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

universel cardiac hospital

কাশ্মীরের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে এক নিবন্ধে এ আহ্বান জানিয়েছেন এইচআরডব্লিউয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি। সোমবার নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তপ্ত ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে বিস্তর।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে মীনাক্ষী লিখেছেন, ‘এক সপ্তাহ হয়ে গেল ভারতীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে। কাশ্মীর এখনো নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দী, তাদের প্রধান নেতারা কারাবন্দী হয়ে আছেন। ফোনের নেটওয়ার্ক সীমিত করে দেওয়া হয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ঈদের দিন কাশ্মীরিরা তাঁদের প্রধান মসজিদে নামাজও পড়তে পারেননি।’

প্রতিবাদরত কাশ্মীরি জনগণের ওপর সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে জুলুম চালিয়েছে, সেটিও নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন মীনাক্ষী, ‘মানুষ তাঁদের প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি, রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পায়নি, এমন কথাও শোনা গেছে। প্রতিবাদরত সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে, এমন খবরও সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। যদিও ভারত সরকার এসব অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া কিছু অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, কিছু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।’

কাশ্মীরে বিক্ষোভের কারণে প্রাণহানির ইতিহাস সামনে এনে মীনাক্ষী বলেছেন, আরও প্রাণহানি রক্ষার স্বার্থেই ভারত সরকারকে একটু নমনীয় হওয়া উচিত।

কলামে মীনাক্ষী লিখেছেন, ‘১৯৪৭ থেকে শুরু করে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই বিদ্রোহে লিপ্ত। ১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তান সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলনে অনেক মানুষের প্রাণ গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী এসব আন্দোলনের জবাব দিয়েছে গুম, নির্যাতন ও হত্যার মাধ্যমে। এই অঞ্চলে আর মানবাধিকার লঙ্ঘন কাম্য নয়।’

দমনমূলক পদক্ষেপের বদলে কাশ্মীরে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা উচিত ভারত সরকারের, এমনটাও লিখেছেন মীনাক্ষী, ‘ভারত সরকারের উচিত বিভিন্ন দমনমূলক আইন রদ করা, চেকপয়েন্টে কাশ্মীরিদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ বন্ধ করা এবং যাঁরা কাশ্মীর থেকে উৎখাত হয়েছেন, তাঁদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে ১৯৯০-এ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীর থেকে যেসব হিন্দু উৎখাত হয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা।’

কলামের শেষ অংশে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নমনীয় হতে আহ্বান জানিয়ে মীনাক্ষী লিখেন, ‘রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া উচিত, যোগাযোগের অচলাবস্থা দূর করা উচিত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত। বিশেষ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক আইনগুলো একটি সাময়িক সময়ের জন্য কিছু অধিকার স্থগিত রাখার বিষয়কে সমর্থন দিয়ে থাকে। কিন্তু বিষয়টা যখন নিয়মিত হয়ে যায়, তখন সেটি সমর্থন করা যায় না। কাশ্মীরের পরবর্তী প্রজন্মকে যেন হিংসার আগুনে না পুড়তে হয়, সে কারণে ভারত সরকারের এখনই পিছু হটা উচিত।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে