২১৪৫টি পোশাক কারখানায় নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন

ডেস্ক রিপোর্ট

পোশাক কারখানা
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্মেন্টস সেক্টরে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের পর গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজার জেলার আওতাধীন ৩১২৬টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৮৫টি কারখানা বন্ধ রয়েছে এবং ২১৪৫টি কারখানায় নতুন বেতন কাঠামো নিশ্চিত করা হয়েছে।

অবশিষ্ট ৮৯৬টি কারখানায় নতুন বেতন কাঠামো বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বিধি বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে দাবি করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন।

universel cardiac hospital

সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৃতীয় বৈঠকে একথা জানান তিনি। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নুর (কিশোরগঞ্জ-৩) সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা-৩), মো. কামরুল ইসলাম (ঢাকা-২), মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), মানু মজুমদার (নেত্রকোণা-১) ও শামসুন নাহার (মহিলা আসন-১৩) বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত সচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ নেয়ার পর গার্মেন্টস সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা হতে ৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। সার্বক্ষণিক শ্রম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে শ্রম অধিদফতর এবং কলকারখানা ও পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ২৯টি টিম গঠন করা হয়। এই টিম মনিটরিং করে এই তথ্য পেয়েছে।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে আরও জানা যায়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান সঞ্চয় কুমার সেন বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এডিপিভুক্ত প্রকল্পের বাস্তবায়িত অবস্থান কমিটিতে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোট ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি বিনিয়োগকৃত প্রকল্প এবং ৫টি কারিগরি প্রকল্প এবং ১টি পিপিপি প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ১৬৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা । ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩৯ কোটি ২৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। মোট অগ্রগতি ৮৫.৩৬ শতাংশ।

ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রম নিরসন’ শীর্ষক প্রকল্পের ৩টি পর্যায়ে ১ লাখ ৯০ হাজার শিশু শ্রমিককে ১৮ মাসব্যাপী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও ৬ মাসব্যাপী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তোলা হয়েছে। ৪র্থ পর্যায়ে ২০২০ সালের মধ্যে ১ লাখ শিশুকে ৬ মাসব্যাপী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও ৪ মাসব্যাপী নির্বাচিত ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

বৈঠকে মানু মজুমদার বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় চিঠি চালাচালির কারণে প্রকল্পের কাজে বিলম্ব হয়। তাই মন্ত্রণালয় কমিটির সহযোগিতা নিলে কমিটি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাজটি অতিদ্রুত সম্পন্ন হতে পারে।

তিনি বলেন, কোনো শিশু যখন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে তারা অবশ্যই হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়ে এবং তাদের রুজি-রোজগার দিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে। এই রুজি-রোজগার করা শিশুটিকে পরিবার থেকে আলাদা করলে হতদরিদ্র পরিবারটির অবস্থা কী হবে? শিশুটিকে আলাদা করে এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসলে তাদের জন্য কোনো বেতন-ভাতার ব্যবস্থা আছে কি-না জানতে চান।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান সঞ্জয় কুমার সেন বলেন, ৩৮টি কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত শিশুশ্রম নিরসন কমিটি রয়েছে। সেখানে এখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান।

তিনি আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুটিকে শিক্ষা গ্রহণকালীন বৃত্তি বাবদ প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়ে থাকে ।

মানু মজুমদার বলেন, একটি শিশু যদি কর্মস্থলে ৫ হাজার টাকা পায়, সেখানে শিক্ষা গ্রহণকালীন ১ হাজার টাকা বাবদ বৃত্তি প্রদান করলে ওই হতদরিদ্র পরিবারটির চলতে সমস্যা হবে। একটি হতদরিদ্র পরিবারের প্রয়োজনে তার শিশুটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকে। শিশুটিকে যদি তাদের কর্মস্থল থেকে নিয়ে আসা হয় সেখানে পরিবারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে কোন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি-না বলে তিনি জানতে চান।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান সঞ্জয় কুমার সেন জানান, প্রজেক্ট যখন ডিজাইন করা হয় তখন প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে রাখা হয়েছিল।

তিনি বলেন, প্রতি পরিবারকে যদি ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হতো, তা হলে ওই টাকা থেকে প্রতিমাসে তারা ৩ হাজার টাকা আয় করতে পারতো। কিন্তু পরবর্তীতে প্লানিং কমিশন সেটা বাতিল করে দেন। তবে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ শিশুরা বিভিন্ন ট্রেডে ভালো ফলাফল করে থাকে তাদের পরিবারের জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করা হয়।

এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. রেজাউল হক বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী শিশুরা কোনো কর্মে নিযুক্ত হতে পারবে না। পাশাপাশি এসডিজি অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধর্মের শিশুকে শিশুশ্রম থেকে মুক্ত করতে হবে বলে শিশুশ্রম আইনে উল্লেখ রয়েছে। এ কারণেই এই ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং অন্যান্য কিছু মন্ত্রণালয়ও এ কাজে যুক্ত রয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে