কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা দুই বছরে ৪৩ হত্যা মামলার আসামি

ডেস্ক রিপোর্ট

রোহিঙ্গার কারাদণ্ড
রোহিঙ্গার কারাদণ্ড। ছবি : সংগৃহিত

দেশে রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে ৷ গত দুই বছরে বিভিন্ন অপরাধে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ৪৭১টি মামলা হয়েছে ৷ এর মধ্যে হত্যার ঘটনা ৪৩টি ৷ এছাড়া ধর্ষণ, অপহরণ, মাদক চোরাচালানের অভিযোগও রয়েছে। খবর ডয়চে ভেলের।

গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনয়িনের জাদিমুরা এলাকায় হত্যা করা হয় স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে ৷ তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ৷

universel cardiac hospital

এই হত্যার সঙ্গে রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীরা জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷ প্রতিবাদে জাদিমুরা ক্যাম্পের আশেপাশে ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান স্থানীয়রা ৷

শুক্রবার গভীর রাতে টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ শাহ ও মো. শুক্কুর নামে দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হন ৷

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ওই দু’জন যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার আসামি ৷ তারা জাদিমুরা ক্যাম্পে অবস্থান করছে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালালে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে করে গুলি ছোড়ে ৷ পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে ওই দু’জন নিহত হয়৷ তাদের অবস্থান থেকে দু’টি দেশে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে গত ২২ আগস্ট বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দু’জন রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হন৷ তারা ইয়াবার চালান নিয়ে আসছিল বলে জানিয়েছিল বিজিবি ৷

মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে আশা শুরু করে ৷ এই ধাপের আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আসে কক্সবাজারে৷ তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছেন ৷

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে৷ গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ৪৭১টি মামলা হয়েছে ৷ আর এসব মামলায় আসামির সংখ্যা এক হাজার ৮৮ জন।

দুই শতাধিক মাদক চোরাচালান মামলা রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে৷ মানব পাচারের মামলাও রয়েছে চারটি৷ এছাড়া অস্ত্র, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, নারী নির্যাতন, অপহরণ ও পুলিশের ওপর হামলার মামলাও রয়েছে ৷ কিছু রোহিঙ্গা নারীর বিরুদ্ধে যৌন ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে ৷

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে ৷ ইয়াবার উৎস যেহেতু মিয়ানমার, আর তারা এসেছেনও মিয়ানমার থেকে, তাই এই ব্যবসায় তাদের যোগাযোগ ভালো ৷ সে কারণেই তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে মনে হয়।

তবে রোহিঙ্গাদের এই অপরাধ প্রবণতা তাদের নিজেদের মধ্যেই বেশি উল্লেখ করে মো. ইকবাল হোসেন বলেন, স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের তেমন বিরোধ নেই ৷ দুই বছরে যে ৪৩ জনকে রোহিঙ্গারা হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে একমাত্র বৃহস্পতিবার নিহত যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকই স্থানীয় বাংলাদেশি ৷ বাকি ৪২ জনই রোহিঙ্গা শরণার্থী।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা বাড়লেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি ৷ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে নয়টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে ৷ ক্যাম্পগুলোতে ১১শ’ পুলিশ ফোর্স সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মুখপাত্র মো. ইউনূস আরমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমাদের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষুদ্র একটি অংশের অপরাধে জড়িয়ে পড়া অত্যন্ত দুঃখজনক ৷ এটা আমাদেরও বিব্রত করে ৷ কিন্তু যারা মাদক পাচারসহ নানা অপরাধ করছেন, তাদের মূলত স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে ৷ আর যেসব রোহিঙ্গা এইসব অপরাধ করছে তারা ক্যাম্পে থাকে না৷ ক্যাম্পের নাম্বার থাকলেও তারা বাইরে থাকে৷ তবে অপরাধ করার পর অনেকে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

মো. ইউনূস আরমানের অভিযোগ, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের ইয়াবা পাচারের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা ৷

তিনি বলেন, কক্সবাজারে মাদক ব্যবসা করে কারা বিলাসবহুল বাড়ি ও সম্পদের মালিক তা তো আপনারাই জানেন৷ স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোও একইভাবে গরিব রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে৷ হত্যাকাণ্ডগুলোও ক্যাম্পের বাইরে হয়েছে।

 সূত্র : ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে