রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সহ্য করবে না চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মিয়ানমারের ওপর চাপ সহ্য করবে না চীন
ছবি : সংগৃহিত

মিয়ানমারে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত চেন হাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সহ্য করবে না বলে জানিয়েছে। বেইজিং রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে থাকবে বলে সেনাবাহিনী প্রধান মিং অং হ্লেইং কে আশ্বস্ত করেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাপ্রধান মিং অং হ্লেইংয়ের দেশটিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চেন হাই-এর বৈঠক হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধানের দফতর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের কথা জানানো হয়।

চীনের রাষ্ট্রদূত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। প্রথমত, রোহিঙ্গা এবং মানবাধিকার ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সহ্য করবে না বেইজিং।

দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সান এবং মানডালায় অঞ্চলের শহর পিও ও লুইনে সহিংস হামলায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা।

তৃতীয়ত, মিয়ানমারের শান্তি প্রক্রিয়া এবং শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্ভাব্য পথ খুঁজতে সহায়তা করবে চীন।

বাংলাদেশে বর্তমানে এগারো লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মায়ানমার থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে।

২২ আগস্ট প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। তা থেকে সাড়ে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গার নাম প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচন করে বাংলাদেশকে দেয় মিয়ানমার।

প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা ১০৩৭টি পরিবারের মধ্যে ৩৩৯টি পরিবারের একজন করে প্রতিনিধির সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংগঠন ইউএনএইচসিআর সাক্ষাত নেয়।

তাদের সবাই জানায়, শর্ত পূরণ না হলে তারা মিয়ানমারে ফিরতে চান না। তাদের শর্ত ছিল- নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়িঘর জমি ফেরত পাবার নিশ্চয়তা। তাদের অনাগ্রহের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্ভব হয়নি।

চীন ও মিয়ানমার সম্পর্ক

মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষা করা চীনের স্বার্থ। কারণ চীনের গ্যাস এবং জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

দক্ষিণ চীন সাগরের মালাক্কা প্রণালী দিয়ে চীনের ৮৫ শতাংশ তেল এবং জ্বালানি গ্যাস সরবরাহ হয়। সেই প্রণালীতে শত্রু ভাবাপন্ন দেশের নিয়ন্ত্রণ থাকায় চীনকে নানারকম সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হতে হবে।

চীনের বড় আশঙ্কা হল, মালাক্কা প্রণালীকে তারা যদি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে না নিতে পারে, তাহলে যে কোন সময়, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য বিশেষ করে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেজন্য তারা মিয়ানমার, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের মাধ্যমে তাদের জ্বালানি সরবরাহের বিকল্প একটি ব্যবস্থা করে রেখেছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপকূলে চাউথিউ নামের একটি বন্দরে চীন সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে।  চীন মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল এবং জ্বালানি গ্যাস আমদানি করে, যা কিনা এই বন্দরে নামানো হয়।

এই তেল এবং জ্বালানি গ্যাস সরবরাহের জন্য চীনারা গত কয়েক বছর ধরে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে ওই বন্দর দিয়ে দুটি পাইপলাইন বসিয়েছে চীন এবং এজন্য তারা মিয়ানমারকে অনেক অর্থ দিয়েছে।

ওই পাইপলাইন দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের তেল এবং জ্বালানি গ্যাস চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে পাঠানো হয়।

পাইপলাইনের যেন কোন ক্ষতি না হয় এবং জ্বালানি তেল/গ্যাসের সরবরাহ যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকতে পারে, এ কারণে চীন কিছুটা মিয়ানমার সরকারের কাছে দায়বব্ধ।

কাজেই এই পাইপলাইন যেহেতু রাখাইন অঞ্চলের ভেতর দিয়ে যায়। তাই রাখাইন রাজ্য যেন মিয়ানমার সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেটা চীনের স্বার্থের মধ্যেও পড়ে।

তাছাড়া, মিয়ানমারে ভেতরে চীনের বহু দশকের বিনোয়োগ রয়েছে। ষাটের দশক থেকে মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসন এবং অতি সম্প্রতি যে দলীয় রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদের সঙ্গেও চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে