আজ বিদ্রোহী কবি নজরুলের প্রয়াণ দিবস

মত ও পথ ডেস্ক

কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ফাইল ছবি

জ্যৈষ্ঠে এসেছিলেন তিনি। ভাদ্রে বিদায় নিয়েছেন। শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ দীপ্ত শিখার মতো জ্বলে উঠেছিল তার কণ্ঠে। সাম্প্রদায়িকতার বিষকে দূর করে তুলে এনেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার অমৃত বাণী। আবার তিনিই কোমল সুকুমার হৃদয়ানুভবে আবেগে থরথর। তিনি বিদ্রোহী, তিনিই গানের পাখি বুলবুল। জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিতি তার, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।

ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন-শোষণবিরোধী মুক্তির আন্দোলন থেকে শুরু করে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার কবিতা ও গান ছিল অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। আজও তিনি প্রেরণার উৎস জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে। আজ ১২ ভাদ্র (২৭ আগস্ট) এই বিদ্রোহী, মানবতাবাদী কবির ৪৪তম প্রয়াণ দিবস। তার জীবনকাল ৭৭ বছরের হলেও তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। তবে প্রায় দুই যুগের সেই সৃজনশীল সাহিত্যও বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতি ও জনজীবনের অতুলনীয় অমূল্য সম্পদ।

universel cardiac hospital

১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠে অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় যে মানুষটি আবির্ভূত হয়েছিলেন প্রকৃতির ঝোড়ো হাওয়া হয়ে, ঢাকার পিজি হাসপাতালের (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) কেবিনে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্রে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তাকে। বিদ্রোহী কবি মহিমান্বিত হন বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে। ‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই’- গানের বাণীতে স্পন্দিত তার এ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করে। জাতি আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে এই ব্যক্তিত্বকে।

সবাইকে চমকে দিয়ে বাংলার সাহিত্যাকাশে নজরুলের অভ্যুদয় শুধু ধূমকেতুর সঙ্গেই তুলনীয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন, ‘…আয় চলে আয় রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,/দুর্দিনের এই দুর্গশিরে/ উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

নজরুলের সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি ও বিদ্রোহ। ধর্মীয় বৈষম্য ও কূপমবিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রবল উচ্চকিত। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত পরিচিত বিদ্রোহী কবি হিসেবেই। যার লেখনীতে ধ্বনিত হয়েছে এই বাণী- ‘মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত/যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না/অত্যাচারীর খড়্‌গ-কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না’। তাই আজও তিনি প্রাসঙ্গিক। একদিকে ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, অন্যদিকে শ্যামাসঙ্গীত লিখে তিনি বাঙালি মানসের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আরও সুগভীর করেছেন। প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন তিনি।

জাতীয় কবির ৪৪তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন-প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশন দিনব্যাপী স্মরণ করবে আজ তাকে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ পাবে তাকে নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে