চলতি মাসেই মাতারবাড়ী গভীর সুমুদ্রবন্দর নির্মাণে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুমোদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটর বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আন্তজার্তিক ট্রাক টার্মিনাল হচ্ছে। মংলা বন্দর এলাকায় এই টার্মিনাল নির্মিত হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম।
বৈঠকে কমিটির সদস্য শাজাহান খান, রণজিৎ কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর ও এস এম শাহজাদা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ১৮ হাজার ৫৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এই প্রকল্পে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) খরচ করবে ৯ হাজার ৬১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং সড়ক বিভাগ খরচ করবে ৮ হাজার ৯৬১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষের খরচের অংশের মধ্যে নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে ২ হাজার ৫৮৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জাইকা) দেবে করবে ৭ হাজার ৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া সড়ক বিভাগের ব্যয়ের বড় অংশও জাইকা দেবে।
কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, মাতারবাড়ী বন্দরের গভীরতা হবে ১৬ মিটার। এখানে ৮ হাজার টিইইউস ধারণক্ষমতার কন্টেইনার জাহাজ ও এক লাখ মেট্রিকটন ধারণক্ষমতার কার্গো জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে।
ডিপিপি অনুসারে, প্রকল্পের আওতায় মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ৪৬০ ও ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি জেটি নির্মাণ করা হবে। ২০২৪ সালে জেটি দুটি চালু হবে।
একই কার্যপত্রে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে আন্তজার্তিক ট্রাক টার্মিনাল কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মংলা সুমদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে এটি নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫শ’ কোটি টাকা।
বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলায় এই ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণে সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে এই খরচ বহন হবে। কমপক্ষে এক হাজার ট্রাক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন টার্মিনালটির কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকে উত্থাপিত মংলা বন্দরের সহকারি ব্যবস্থাপক ফজিলা খাতুন স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বন্দরের ২০১৮-২০১৯ অর্থ-বছরের সমাপ্তকৃত প্রকল্প, অনুমোদিত প্রকল্প, ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থ-বছরের মংলা বন্দরে ৪টি প্রকল্প শেষ হয়েছে।
এরমধ্যে রয়েছে, মংলা বন্দর হতে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র পর্যন্ত পশুর চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের রুজভেল্ট জেটির বিদ্যমান অবকাঠামোর উন্নয়ন, মংলা বন্দরের জন্য টাগ বোট সংগ্রহ এবং মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহ।
একই প্রতিবেদনে ভবিষ্যত প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, মংলা বন্দরের সুবিধাদির স¤প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, আপগ্রেডেশন অব মংলা পোর্ট, মংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, মংলা বন্দরের জন্য ৬টি জলযান সংগ্রহ, একটি ট্রেলিং সাকশান হপার ড্রেজার সংগ্রহ, পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং. দু’টি কন্টেইনার জেটি নির্মাণ, নেভিগেশনাল এইডস টু মংলা পোর্ট, মংলা বন্দরে শেখ রাসেল টাওয়ার নির্মাণসহ নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
- আরও পড়ুন >> ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদক পদে লড়তে বৈধতা পেলেন ৪৫ প্রার্থী
- আরও পড়ুন >> মানবতা ও সাম্যের কবি
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর (চ্যানেলের গুপ্তা বাঁকসহ) নাব্যতা সচল রাখার লক্ষ্যে নদীর তলদেশে জমাটকৃত পলিথিন অপসারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মংলা বন্দরে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।