বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মিন্নির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালতে মিন্নির জামিনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন, আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, ব্যারিস্টার অনিক আর হক, আইনজীবী এম মঈনুল ইসলাম, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম, রোহানি সিদ্দিকা ও জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন।
এর আগে গত ২০ আগস্ট হাইকোর্টের এই বেঞ্চ মিন্নির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয় এবং এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার নথিসহ ২৮ আগস্ট হাইকোর্টে তলব করা হয়। এছাড়া মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে দাবি করে দেয়া সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে বরগুনার এসপিকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সে অনুযায়ী বুধবার এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার নথিসহ হাজির হন। সেই সাথে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে বরগুনার এসপির দেয়া লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হয়। এরপর আদালত এবিষয়ে শুনানি নিয়ে রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এই জামিন আবেদন ফেরত নেন মিন্নির আইনজীবী। ওইদিন হাইকোর্ট বেঞ্চ মিন্নিকে জামিন না দিয়ে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে চেয়ে বলেন, জামিন দিতে হলে আগে এ মামলার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি দেখতে হবে। তাই আমরা শুধু রুল জারি করতে পারি।
তখন মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না মিন্নির জন্য জামিন প্রার্থনা করলে আদালত বলেন, আমরা এখন রুল দিতে পারি অন্যথায় আপনারা আবেদনটি ‘টেক ব্যাক’ করতে পারেন।
তখন মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ওকে, আমরা জামিন আবেদনটি (ফেরত নিচ্ছি) ‘টেক ব্যাক’ করছি।
এরপর মিন্নির এই জামিন আবেদনটি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য আনা হয়।
এর আগে গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। তার আগে গত ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যার ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হলে সাড়া দেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশাকে। কিন্তু আয়েশার শ্বশুর মামলার ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়েশা জড়িত এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলাটির তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়।
পরবর্তীতে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় মিন্নিকে। আর এই মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে গত ২ জুলাই এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।