দেশে আইনের শাসন নেই : ড. কামাল

মত ও পথ প্রতিবেদক

বক্তব্য দিচ্ছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন
গণফোরামের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ছবি : সংগৃহিত

বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপসহীনভাবে রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আইনের যথাযথ শাসন থাকলে জনগণ সব ক্ষমতা ভোগ করতে পারত। কোনো একক ব্যক্তি ক্ষমতা ভোগ করতে পারত না। আরেকবার চ্যালেঞ্জ নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। ১৬ আনা নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আজ শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

ড. কামাল বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ দরকার। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইনের শাসন আমরা দীর্ঘদিন ধরে চাচ্ছি। আইনের শাসনের অর্থ হলো দেশে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা। তাই আইনের নিরপেক্ষ কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি বলেন, সংবিধানের মূলনীতিকে কেন্দ্র করে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ‘৭২-এর সংবিধানকে অনেকেই কাটছাঁট করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, জনগণের ঐক্যের কারণে আমরা এখনও রক্ষা করতে পেরেছি আমাদের সংবিধান।

ড. কামাল বলেন, শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনও পাইনি। পাইনি আইনের শাসন ও গণতন্ত্র। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণতন্ত্রে বিরোধীদল ও বহুদল থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের সংবিধানের মূলনীতির ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে সুশাসন নেই, আইনের শাসন নেই। তাই দেশে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গত ৫০ বছরে দেশের জনগণ সুশাসন পায়নি। তবে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আজ ভোটাধিকার নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সব আজ কলুষিত। তিনি গণফোরামের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, শুধু ঐক্যবদ্ধ হলেই হবে না, ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামতে হবে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমি নিজেও রাজপথে রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছি।

জেএসডি সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চায় কেবল বিরোধী দলে থাকলে, সরকারে গেলে তারা কায়েম করে স্বৈরতন্ত্র। তারা বিরোধীদলে থাকলে চায় গণতন্ত্র, সরকারে থাকলে স্বৈরতন্ত্র। বিরোধীদলে থাকলে তত্ত্বাবধায়ক, সরকারে থাকলে দলীয় সরকার। বিরাধীদলে থাকলে ধর্মনিরপেক্ষ, সরকারে থাকলে মদিনা সনদ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাতে ভোট ডাকাতি করে গিনেস বুকে ঠাই নিয়েছে। আওয়ামী লীগ একটা বিপদজনক সরকার, তাদের বিদায় করতে হবে। কারণ দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত ৪৮ বছরেও এমন শাসক ক্ষমতায় আসেনি। তিনি বলেন, এই সরকারের লজ্জা নেই, চোখের চামড়া নেই। এই সরকার জনগণের কোনো কাজেই আসবে না। তাই এই সরকার সরাতে কী করতে হবে- তা চূড়ান্ত করতে হবে।

গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমি রাজপথেই মরতে চাই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ড. কামাল হোসেন তার ওপরে জাতির অর্পিত দায়িত্ব অসমপূর্ণ রেখেছেন। ড. কামাল হোসেনকে অবশ্যই রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে আসতে হবে। তিনি বলেন, পরে কী হবে জানি না। তবে রাজপথে মরতে চাই।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এ সরকার হুমকি-ধামকি ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা ভাবছে এতে কাজ হবে। আসলে তারা জানে না তাদের অবস্থা কত খারাপ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আজকে জাতি হতাশ। এ হতাশার জন্য আওয়ামী লীগ একাই দায়ী নয়, গণফোরামের মঞ্চে যারা উপস্থিত আছেন এবং পূর্ব-পুরুষরা যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন তারাও সমানভাবে দায়ী।

তিনি বলেন, ডাকসুর ভিপি হয়ে কোথাও যেতে পারি না। গ্রামে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়। নিরাপদ সড়ক চাইতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হয়। যে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ‘৯০-এর দশকে আন্দোলন করা হয়েছিল তারা আজ বিরোধী দলে।

ভিপি নুর বলেন, আজকে দেশে মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার বলে কিছু নেই। এ সব থেকে রক্ষা পেতে হলে একইমঞ্চে এসে কথা বলতে হবে। একজন আরেকজনের ওপর কাদা ছোড়াছুড়ি না করে একসঙ্গে দেশের হয়ে কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে।

আলোচনা সভায় গণফোরামের নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ড. রেজা কিবরিয়া, মেজর জেনারেল আমসাআ আমিন (অব.), মোশতাক আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে