অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খালি জায়গা পেলেই দালান তোলার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এটা একটা অসুস্থতার মতো হয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্যাদি অবহিতকরণ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (জোন-এ) প্রকল্পের পরিবর্তিত মাস্টারপ্ল্যান, সচিবালয়ে নির্মাণাধীন ২০ তলা ভবনে মন্ত্রিপরিষদ সভা আয়োজনের সংস্থান রাখা, শেরেবাংলা নগরে স্থপতি লুই আই কান প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের ৪৩ একর জমিতে জরাজীর্ণ দ্বিতল ভবন অপসারণ করে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ধারণাগত প্রস্তাবনা উপস্থাপন এবং হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় মাল্টিপারপাস সহযোগী ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনা উপস্থাপনা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ রাস্তা দিতে চায় না, মাঠও দিতে চায় না। বিল্ডিং করে ফেলে। বহুতল ভবন বা যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে সেখানে রাস্তার অবস্থা, সড়কে গাড়ির চাপ, ধারণক্ষমতা ও জনসমাগমের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, কোনো স্থাপনা করতে গেলে দেখতে হবে ওই এলাকার রাস্তায় কতটা গাড়ি চলে, নতুন স্থাপনা নির্মাণের ফলে নতুন কতটা ট্র্যাফিক যোগ হবে। আর তা কতটা নিতে পারবে সেটা দেখতে হবে। যত্রতত্র জমি ব্যবহার করতে পারবে না, এজন্য একটা আইন করার দরবার আছে।
খেলার মাঠ, জলাধার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনগণ ও রাস্তায় গাড়ির চাপ, আবাসিক ভবনে ন্যাচারাল ভেন্টিলেশনসহ বিভিন্ন বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে সুপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কোথাও কোনো স্থাপনা করতে গেলে দেখতে হবে ওই এলাকার রাস্তায় কতটা গাড়ি চলে, নতুন স্থাপনা নির্মাণের ফলে নতুন কতটা ট্র্যাফিক যোগ হবে। ওই রাস্তায় ট্র্যাফিক কতটা নিতে পারবে সেটা দেখতে হবে। সারাদেশে যত্রতত্র জমি ব্যবহার করতে পারবে না, এজন্য একটা আইন করার প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, বারান্দা এবং অগ্নিনির্বাপণ, খোলা জায়গা রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসি সব সময় ব্যবহার করা ঠিক না। এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো না। খোলা জায়গা, ন্যাচারাল বাতাস থাকে, সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা থাকতে হবে, ন্যাচারাল ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে বিল্ডিংয়ের ওপর থেকে, রান্নাঘর থেকে ময়লা নিচে ছুড়ে ফেলেন। গুলশানের মতো জায়গাতেও দেখা যায় দুই বিল্ডিংয়ের মাঝে এক মানুষ সমান ময়লার স্তূপ জমে আছে।
সচিবালয়ের যেসব মন্ত্রণালয়ে লোকজন বেশি আসে সেসব মন্ত্রণালয়গুলোকে ভবনের নিচের দিকে রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সচিবালয়ে যেসব মন্ত্রণালয়ে মানুষ বেশি আসে তাদের অফিস ভবনের নিচের দিকে রাখা, হাঁটাপথের মধ্যে রাখা দরকার। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রচুর লোক আসে, তাদের দিয়ে রেখেছে ওপরে। সারাক্ষণ মানুষ আসে, লিফটেও ভিড়।
ভবনের সব জায়গায় টয়লেট না করে একপাশে নির্দিষ্ট জায়গায় টয়লেটগুলো করার নির্দেশনা দেন তিনি। সার্ভিস লাইন নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এখন থেকে গ্যাস ও পানির লাইনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ লাইনকেও ভূগর্ভে স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
শেরেবাংলা নগরে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী খ্যাতনামা স্থপতি লুই আই কান-এর সহযোগী স্থপতি হ্যানরি উইলকটকে এ প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক অথবা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন।
এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে হাতিরঝিল এলাকায় পুলিশ প্লাজার সংলগ্ন ভায়াডাক্ট ১ ও ২ এর পাশে ১.৩ একর এলাকায় ২০ তলা নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাবটি বাতিল করে এটি পদ্মা বা যমুনার পাড়ে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্থাপত্য অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি সায়মা বিনতে আলম, হাতিরঝিল প্রজেক্টের কনসালট্যান্ট এআর প্যাট্রিক ডি রোজারিও পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।