মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, মিয়ানমার বলছে, সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলায় তারা রাখাইনে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানে যা ঘটেছে তা গণহত্যা। আসুন আমরা কোদালকে কোদাল বলতে শিখি। খবর সিএনএ’র।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ওআইসি এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কর্তৃক আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে এটিই মাহাথিরের প্রথম ভাষণ।
সভায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন সোজাসাপ্টা কথা বলি। রাখাইনে অসংখ্য মানুষ অবর্ণনীয় নৃশংসতার শিকার হয়েছে। এমনকি সেখানে পুরো একটা প্রজন্ম নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে দেখা গেছে। সেখানে গণহত্যা, পদ্ধতিগত ধর্ষণসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, এই নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারে। বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে।
ড. মাহাথির বলেন, এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় আমরা বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানাই। মালয়েশিয়াও যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করেছে।
মালয়েশিয়া এক লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে জানিয়ে মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়ায় অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা আরও বেশি। তবে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই কম।
তিনি বলেন, শরণার্থীরা যত দিন শিবিরে থাকবে ততই তারা আরও হতাশ ও মরিয়া হয়ে উঠবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে যা হয়, সেটি হচ্ছে শরণার্থীরা অন্য ধরনের শোষণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তারা মানবপাচার এবং যৌন দাসত্বের মতো ঘটনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তারা কেবল সামনে একটি হিমশীতল ভবিষ্যৎ দেখতে পায়।
মিয়ানমারে পরিস্থিতি মোটেও ভালো না উল্লেখ করে মাহাথির বলেন, রাখাইনে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। তাদের স্থান হয়েছে অভ্যন্তরীণ ক্যাম্পে। বিশ্ব এসব কুখ্যাত বন্দিশিবির সম্পর্কে জানতে পারলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। তারা সেখানে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়নি।
মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, যদি মিয়ানমারের লুকানোর কিছু না থাকে, তবে সেখানকার পরিস্থিতি দেখাতে এত বাধা কেন? জাতিসংঘ প্র্রতিনিধিসহ সাহায্যকারী কর্মীদের সেখানে পরিদর্শন ও সেখানকার ক্যাম্পে যারা আছে তাদের সহায়তার সুযোগ দিক।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের উচিত এ সংকট সমাধান করা। প্রত্যাবর্তন প্রথমেই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। এর আগে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার দু’টি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে না চাওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন মাহাথির। তিনি বলেন, এর কারণগুলো স্পষ্ট। কেউ যদি তার সুরক্ষার নিশ্চয়তা বোধ না করে তবে সে ফিরবে না।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বেচ্ছাপ্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে মালয়েশিয়া চাপ অব্যাহত রাখবে বলে জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভয়, ঘৃণা, ত্রাস সৃষ্টি করে প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত করছে বলে অভিযোগ করেন মাহাথিক মোহাম্মদ। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকার অনিচ্ছুক। সুতরাং এ পরিস্থিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই কিছু করতে হবে।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সাহায্য চেয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার উদ্দেশ্যেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এখন সংস্থাটির উচিত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখা।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের পদক্ষেপসহ অন্যদেরও নিজ নিজ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মাহাথির।