৯ মাসে ১২ হাজার কর্মী ফেরত সৌদি থেকে

বিশেষ প্রতিবেদক

সৌদি থেকে কর্মী ফেরত
ফাইল ছবি

সৌদি আরব থেকে গত ৯ মাসে ১২ হাজার বাংলাদেশি কর্মী ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার নারীকর্মীও আছেন।

খবরে প্রকাশ, সৌদি আরব থেকে গত ২৬ আগস্ট একদিনে ফিরে আসা ১১১ জন নারী গৃহশ্রমিকের ৩৮ জন শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আর ৪৮ জনকে নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া হতো না। 

universel cardiac hospital

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম মত ও পথকে জানান, ফেরত আসা শ্রমিকদের অনেকের কাছেই বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। কেন তারা ফিরে আসছেন- সেটা খুঁজে বের করা জরুরি। পরে সে অনুযায়ী করণীয় ঠিক করতে হবে। কারণ না জানলে করণীয় তো ঠিক করা যাবে না।

সৌদি থেকে একদিনে ফিরে আসা নারী শ্রমিকদের মধ্যে নিয়মিত বেতন না দেওয়ায় ৪৮ জন, পর্যাপ্ত খাবার না দেওয়ায় ২৩ জন, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনে ৩৮ জন, ছুটি না দেওয়ায় চারজন, একাধিক বাড়িতে কাজ করানোর জন্য সাতজন, অন্য কফিলের কাছে বিক্রি করে দেওয়ায় একজন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১০ জন, পারিবারিক কারণে একজন, ভিসার মেয়াদ না থাকায় আটজন, চুক্তি (দুই বছর) শেষ হওয়ায় ১৬ জন এবং অন্যান্য কারণে দুজন ফিরে এসেছেন। ওই ১১১ নারীর মধ্যে ৩৪ জন সৌদি আরব যাওয়ার এক থেকে ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসেন।

জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আলী আশরাফ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। পরের বৈঠকে আলোচনা হবে।

কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে উত্থাপিত প্রতিবেদনে সৌদি আরবে কাজ নিয়ে যাওয়া নারীরা নানা নির্যাতনের পাশাপাশি যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে নারী শ্রমিকদের ফিরে আসার ১১টি কারণ চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে একই নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আবার বেতন-ভাতাও পাননি, এমন একাধিক কারণ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৫ সালে এক চুক্তির পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে নারী গৃহশ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই নারী শ্রমিকদের ফেরত আসা শুরু হয়। ফিরে আসা শ্রমিকরা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জানালেও মন্ত্রণালয় নিশ্চুপ ছিল।

সৌদি আরব সফর করে আসা সংসদীয় একটি দলও দাবি করেছিল, নারী গৃহশ্রমিকদের ফেরার কারণ নির্যাতন নয়, কিন্তু বরাবরই ফিরে আসা শ্রমিকদের অভিযোগ ছিল একই। নারীকর্মী ফেরত আসার দুই দিন পর গত ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত কমিটির চতুর্থ বৈঠকে কমিটির সদস্য আলী আশরাফ প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় কমিটির কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে আলোচনা শেষে প্রবাসে কর্মরত থাকাকালে মৃত্যুবরণকারী কর্মীদের কী পরিমাণ আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে তার একটি বিবরণ আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়। এ সময় জানানো হয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বর্তমানে বিশ্বের ২৬টি দেশে বাংলাদেশ মিশনে ২৯টি শ্রম কল্যাণ উইং চালু আছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে