বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, এর বেশিরভাগই সম্ভব হয়েছে শ্রমআয় বৃদ্ধির কারণে। ২০১০-২০১৬ সময়ে ৮০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমাচ্ছে। তবে দারিদ্র্য কমছে তুলনামূলক কম গতিতে। ২০১০ সাল থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমছে।
আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানের আমারি হোটেলে ‘বাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট’ নামে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দারিদ্র্য হার কমেছে অসমভাবে। ২০১৯ সালে পূর্ব এবং পশ্চিমের বিভাগগুলোর দারিদ্র্য পরিস্থিতির ঐতিহাসিক পার্থক্য আবার ফিরে এসেছে। পশ্চিমে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে এবং রাজশাহী ও খুলনায় একই জায়গায় রয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে দারিদ্র্য কমেছে পরিমিতভাবে এবং বরিশাল, ঢাকা ও সিলেটে দ্রুত কমেছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, গত দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করে। কিন্তু এখনও প্রতি ৪ জনের ১ জন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। বাংলাদেশকে আরও অনেক কিছু করতে হবে বিশেষত দারিদ্র্যের নতুন ক্ষেত্রগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যেমন শহর এলাকায় দারিদ্র্য মোকাবেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের অর্ধেক শহরে বাস করবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে, দারিদ্র্য বিমোচনের ৯০ শতাংশই গ্রামে হয়েছে। শহরে দারিদ্র্য কমেছে সীমিত হারে এবং অতি-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শহরের লোকের অংশ একই রয়ে গেছে। ফলে জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচনের গতি ধীর হয়েছে।
কৃষি নয়, গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য হার কমাতে শিল্প ও সেবা খাত বেশি অবদান রেখেছে। আলোচ্য সময়কালে কৃষি প্রবৃদ্ধি ধীর ছিল এবং আগের চেয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে কম অবদান রেখেছে। শহর অঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতে বিশেষত তৈরি পোশাক খাত দারিদ্র্য কমাতে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থানে ধীরগতির কারণে সুবিধা পেতে পারতো এমন পরিবারের অংশ সীমিত হয়েছে। অন্যদিকে সেবা খাতে আত্ম-কর্মসংস্থানে নিয়োজিতদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, যা নগর দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ এবং প্রতিবেদনের সহ-লেখক মারিয়া ইউজেনিয়া জেনিন বলেন, এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যে, প্রথাগত বিভিন্ন চালিকাশক্তি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু অগ্রগতি আনার ক্ষেত্রে কিছু চালকের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে। উপরন্তু আগামী দশকের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ নিজস্ব উদ্ভাবনী নীতি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি অধিকতর পরিশীলিত ও নগরায়িত অর্থনীতিতে দারিদ্র্য মোকাবেলা করতে পারে।
যেহেতু দারিদ্র্য বিমোচনের নতুন ক্ষেত্র যেমন শহরের দারিদ্র্য এবং এক সময়কার পূর্ব-পশ্চিম বিভাগের অবস্থার পার্থক্য ফিরে এসেছে, সেহেতু এ প্রতিবেদনে প্রথাগত সমাধানের পাশাপাশি নতুন উপায় গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে করে বাংলাদেশ দ্রুত দারিদ্র্য কমাতে পারে।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।