দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
তারা বলেছেন, মানবিক মূল্যবোধের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আজ জাতিকে গ্রাস করেছে। কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল আদর্শহীন যুব ও ছাত্রসংগঠনের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফের পাঠানো এক বিবৃতিতে কথাগুলো বলেন দেশের ১১ বিশিষ্ট নাগরিক।
গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কয়েকজন নেতাকর্মী। ইতিমধ্যে তাদের ১৩ জনতে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বিবৃতিতে বিশিষ্টজনরা বলেন, এক গভীর উৎকণ্ঠা ও অসীম বেদনায় নিমজ্জিত আজ পুরো জাতি। বুয়েট শিক্ষায়তনে সহপাঠী আবরার ফাহাদকে একদল ছাত্রলীগ কর্মী কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে যুবলীগ নামক যুবসংগঠনের সামাজিক অনাচার, মাদক ব্যবসা ও দুর্নীতির অবিশ্বাস্য নিদর্শন আমাদের দারুণভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ছাত্র ও যুবসংগঠনের এ বিপথগামিতা আমাদের হতাশ ও ব্যথিত করে।
সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো রাজনৈতিক দলের আদর্শবিহীন দেউলিয়া চরিত্র প্রমাণ করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। তারা বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলসমূহ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে। শুধু তা-ই নয়, কোনো প্রকার আদর্শের ভিত্তিতে দল ও অঙ্গসংগঠন পরিচালনা না করে শুধু পেশিশক্তিনির্ভর দল গঠন ও পরিচালনা কী ভয়াবহ পরিণতি আনয়ন করে, তা আজ সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আবরার হত্যার শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মধ্য দিয়ে এ ভয়াবহ সংকট নিরসন হবে না বলে বিশ্বাস করেন এই ১১ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে বলেন, আমরা মনে করি মানবিক মূল্যবোধের যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আজ জাতিকে গ্রাস করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকার, শাসক দল ও সব রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ দল, অঙ্গসংগঠন, সরকার ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীল-সংস্কৃতির বীজ উপ্ত করতে হবে। বিশেষ করে সরকার ও সরকারি দলকে এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জাতি এক ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবে। কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল আদর্শহীন যুব ও ছাত্রসংগঠনের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না।
দ্রুত এই সংকট থেকে জাতি ও দেশকে রক্ষা করতে সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন এবং একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা।
বিবৃতিদাতারা হলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, সরোয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ।