আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিএনপির ২ দিনের কর্মসূচি

মত ও পথ প্রতিবেদক

খন্দকার মোশাররফ হোসেন
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফাইল ছবি

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা প্রতিবাদে এবং ভারতের সঙ্গে চুক্তিকে ‘স্বার্থবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

কর্মসূচির মধ্যে শনিবার ঢাকাসহ দেশের সকল মহানগরে জনসমাবেশ করবে দলটি। এছাড়া রবিবার দেশের সকল জেলা সদরে এই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

universel cardiac hospital

বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যাসহ সাম্প্রতিক সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তিনি।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে প্রতিবেশী দেশকে খুশি করতে অসম চুক্তি হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সফরকালে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের জনগণের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। চট্টগ্রাম ও মঙ্গলা বন্দর নির্বিঘ্নে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে যৌথ পর্যবেক্ষণের জন্য রাডার বসানোর অনুমতি দিয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশ থেকে এলপিজি গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে। অথচ বহু বছর ধরে তিস্তা এবং ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার ব্যাপারে শুধুই আলোচনা করে চলেছে। এবারও শুধু আশাই পেয়েছে- কোনো স্পষ্ট নিশ্চয়তা পায়নি।

তিনি বলেন, আসামের নাগরিক পঞ্জির প্রেক্ষিতে কয়েক লাখ আসামবাসীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আসাম রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্পষ্ট হুমকির মুখে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতির উল্লেখ নেই।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ভারতে পাটজাত দ্রব্যসহ অন্যান্যে পণ্য রপ্তানির ওপর আরোপিত অন্যায় বাধা অপসারণে নিশ্চয়তা আদায় করতেও বাংলাদেশ সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, রাষ্ট্রীয় সফরের আগে সরকার যথাযথ প্রস্তুতি নেয়নি, দেশের জনগণকে কিছু জানতেও দেয়নি। এসব নিজ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে শক্তিমান প্রতিবেশীকে খুশি করে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার সাময়িক ও ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী এসব চুক্তির প্রতিবাদে দেশবাসী ফুঁসে উঠেছে। সচেতন ছাত্র সমাজ আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে। সমালোচনায় ভীত সরকার তার দলীয় লাঠিয়ালদের দিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট দেওয়ার জন্য বুয়েটের মেধাবি ছাত্র আবরারকে খুন করেছে। কিন্তু এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড আন্দোলনের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে মাত্রা কাউকে ভীত করতে পারেনি।

মোশাররফ বলেন, দেশের স্বার্থে যা কিছু দরকার তার সবকিছুই অনিশ্চয়তায় ঝুলিয়ে রেখে অন্যের স্বার্থ পূরণ করা সরকারের নতজানুর নীতির প্রমাণ। বাংলাদেশ এলপিজি আমদানিকারক দেশ হয়ে প্রতিবেশীর প্রয়োজনে তা রপ্তানির জন্য ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ওমেরা পেট্টোলিয়াম লি: এবং বেক্সিমকো এলপিজি ইউনিট-১’কে লাভবান করার উদ্যোগ ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিশেষকে লাভবান করবে-দেশকে নয়। দেড় হাজার কিলোমিটার পথের স্থলে এখন মাত্র ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এলপিজি গ্যাস ভারত পৌঁছবে। তাদের এই সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার’ ছাড়া আমরা কি পেলাম?

তিনি বলেন, এর আগের বার ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, আমরা যা দিয়েছি তা ভারত চিরদিন মনে রাখবে। তাহলে এবার আরও এতো কিছু দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো? তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলেন, দেশের স্বার্থে বিদেশীদের গ্যাস দিতে রাজি হননি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। এবার আমদানি করা ডিউটি ফ্রি এলপিজি দেওয়ার উদ্দেশ্য তাহলে কি?

মোশাররফ বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে নির্বিঘ্নে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় আমাদের দেশের অবকাঠামো, নাগরিক পরিবহন, চলাচল এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতির নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র উপকূলে যৌথ নজরদারির ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেশবাসীর কাছে গোপন করা হয়েছে- যা জানার অধিকার তাদের রয়েছে।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের মাধ্যমে দেশের বিপুল লাভ ও উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে নানা অবান্তর বিষয়ের অবতারণা করেছেন। অসত্য তথ্য ও ইতিহাস বর্ণনা করে তিনি ব্যর্থতা ঢাকার অপচেষ্টা করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। অনেক বিষয়ের মধ্যে আমরা আজ শুধু গঙ্গা চুক্তি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে তিনি যেসব তথ্য দিয়েছেন সে সম্পর্কে সত্য তথ্য জানাতে চাই। প্রকৃতপক্ষে, ৭৫ এর আগে গঙ্গার পানি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি-সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। চুক্তি হয়েছে ১৯৭৭ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে