মিরসরাইয়ে নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রায় প্রস্তুত

বিশেষ প্রতিবেদক

মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল। ছবি : সংগৃহিত

সাগর ঘেঁষে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের শুরুতে এক হাজার ১৫০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠছে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল। অবস্থানগত দিক থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭৭ কিলোমিটার দূরত্বের কারণে বিনিয়োগের জন্যও আকর্ষণীয় এই অর্থনৈতিক অঞ্চল।

গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর এরই মধ্যে ভূমি উন্নয়নের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় প্রস্তুত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাই বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক সাড়া মিলছে। আবার নিজেদের পছন্দের বিনিয়োগ পেতে বেপজাও নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগকারীদের কাছে গিয়ে নিজেদের উপযোগিতা ও সক্ষমতা তুলে ধরছে।

সব কিছু প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোলে আগামী বছরে প্লট বরাদ্দ এবং ২০২১ সাল নাগাদ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে বিদেশে পণ্য রপ্তানি হবে বলে আশা করছে বেপজা।

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এ মাসের শুরুতে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দুটি বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বেপজার আটটি ইপিজেডের পাশাপাশি মূলত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগ উপযোগিতা তুলে ধরা।

এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, অবস্থান, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা, বেপজার সক্ষমতার বিষয়টি সম্মেলনে উপস্থিত বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরে। সেখানে ধারণার চেয়ে বেশি সাড়া মিলেছে বলে বেপজা সূত্র জানায়।

বৃহৎ আয়তনের পাশাপাশি অবস্থান ও পরিবেশগত কারণে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে বেপজার প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়ার কারণে প্লট বরাদ্দেও বাছ-বিচার করবে বলে বেপজাসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়।

বিশেষ করে প্রযুক্তিনির্ভর কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেওয়া হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে যেমন প্রাধান্য দেওয়া হবে, তেমনি গার্মেন্টের তুলনায় লেদার, প্রযুক্তিনির্ভর ভারী শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ কেমন জানতে চাইলে বেপজার এই মুখপাত্র বলেন, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আমরা প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আমাদের ইপিজেডগুলোর বর্তমান বিনিয়োগকারীরাই আগ্রহ দেখাচ্ছে বেশি। বেপজার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট বলেই কিন্তু তারা আমাদের প্রকল্পে আরো বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। এ ছাড়া আমরা গত সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে বিনিয়োগ সম্মেলন করেছি। সেখানে আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি সাড়া পাওয়া গেছে।

বেপজা সূত্র জানায়, আয়তনের দিক থেকে এটিই হবে বেপজার সবচেয়ে বড় প্রকল্প। কারণ বেপজার আওতাধীন আটটি ইপিজেডের সম্মিলিত আয়তন দুই হাজার ৩০৮ একর, সেখানে মিরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের আয়তন প্রায় এর অর্ধেক। পুরো প্রকল্পটি এক হাজার ১৫০ একরের হলেও রাস্তাঘাটসহ পরিবেশগত ছাড়ের পর শুধু বিনিয়োগের জন্য থাকবে ৪৪৬ একর জমি।

এই জায়গাটিকে ৬১৮টি প্লটে ভাগ করা হবে। বেপজার অন্যান্য ইপিজেডে প্রতিটি প্লটের আয়তন দুই হাজার বর্গমিটার। তবে মিরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিটি প্লট হবে তিন হাজার ৬০০ বর্গমিটারের। বেপজা আশা করছে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০০ থেকে ৩৫০টি বিভিন্ন ধরনের কারখানা গড়ে উঠবে। যেখানে বিনিয়োগ আসবে চার থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। আর সম্ভাব্য কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে চার থেকে পাঁচ লাখ। প্রকল্পটির ব্যাপকতা বোঝাতে ছোট কয়েকটি তথ্য সংযোজন করা যেতে পারে।

১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর থেকে হিসাব করলে বেপজার বাকি আট ইপিজেডেই সব মিলিয়ে গত ৩৫ বছরে বিনিয়োগ এসেছে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।

এই দীর্ঘ সময়ে সব ইপিজেড মিলিয়ে কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ লাখ দুই হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের। গত অর্থবছরে এই আট ইপিজেড থেকে প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে