রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজ মঙ্গলবার জাপান সম্রাটের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। টোকিও রাজপ্রাসাদে ১৭৪ দেশ ও অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার নেতা ও প্রতিনিধির সামনে সম্রাট নারুহিতো জাপানের ১২৬তম সম্রাট হিসেবে তার সিংহাসন আরোহনের ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১টায় সিডেন স্টেট হলের মাতসু কুন জো ম্যা স্টেট রুমে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ‘তাকামিকুরা’ হিসেবে পরিচিত সাড়ে ছয় মিটার উঁচু চাঁদোয়া টানা এই সিংহাসন থেকে সম্রাট তার অধিষ্ঠানের ঘোষণা দেন।
রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী রাশিদা খানম ও জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রবাব ফাতিমা অনুষ্ঠানের মূল কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন। সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবির ওপর কালো কোট পরিহিত রাষ্ট্রপতি দুপুর ১২টা ৩৩ মিনিটে (স্থানীয় সময়) অনুষ্ঠান হলে যোগ দেন।
চলতি বছরের মে মাস থেকে অভিষেকের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে আজকের এই অভিষেকের ঘোষণাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, ৫৯ বছর বয়সী জাপানের সম্রাট তার ৮৫ বছর বয়সী পিতা এমেবিতাস আকিতো সিংহাসন ত্যাগের পর ১ মে নারুহিতো ক্রিসেনথেমাম (চন্দ্রমল্লিকা) সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। জাপানের যুদ্ধপরবর্তী সংবিধানে দেশ ও জনগণের ঐক্যের প্রতীক হচ্ছেন সম্রাট।
তিনি বলেন, সম্রাটের এই অভিষেক অনুষ্ঠান (সোকোরি-সেইডেন-নো-গি) জাপানের ১ হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ। তবে রাজকীয় পরিবারের নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে এই নতুন অধ্যায়ের সূচনা অনুষ্ঠান বিশ্বব্যাপী মানুষ দেখছে।
অনুষ্ঠানে সম্রাট বিশেষ উপলক্ষে সম্রাটদের পরিধেয় ৯ শতকের পূর্বের গাঢ় কমলা রঙের ‘কোরোঝোননো গোহ’ নামের পোশাক পরেন। সম্রাজ্ঞীর পরনে রয়েছে ফলকদার ঐতিহ্যবাহী লোয়ারড কোর্ট কিমোনো।
জাপানের নতুন সম্রাট অনুষ্ঠানে তার ঘোষণায় দেশের সংবিধানের আওতায় এবং জাপানের জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রতীক হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেন।
সম্রাট মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও বিশ্বশান্তি কামনা করে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আমাদের দেশ, আমাদের জনগণের প্রজ্ঞা এবং অবিশ্রান্ত প্রয়াস, অধিকতর উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধুত্ব ও শান্তি ও মানুষের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি অর্জনে অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে পাইন চেম্বার (মাতসু-নো-ম্যা) স্টেট রুমের ফেলার থেকে অভিনন্দন বার্তা প্রদান করেন এবং সম্রাটের দীর্ঘাঘু কামনায় নেতৃত্ব দেন।
এর আগে সম্রাট মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাজপ্রাসাদের স্মৃতি মন্দিরের রাজকীয় পূর্বপুরুষদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সম্রাটের সিংহাসনের দু’দিকে দামি কাপড়ে মোড়ানো ছিল সাম্রাজ্যের প্রতীক ও অলংকার হিসেবে বিবেচিত দর্পণ এবং তলোয়ার। সিংহাসনের পর্দা খুলে দেওয়ার পর সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী উঠে দাঁড়ান এবং প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সম্রাটের সামনে উপস্থিত হয়ে নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সন্ধ্যায় জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভোজসভায় যোগ দেবেন।
রাষ্ট্রপতি জাপান সফর শেষে আগামী ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর সিঙ্গাপুর সফর করবেন। রাষ্ট্রপতি ২৭ অক্টোবর সকালে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।