ক্রিকেটারদের ধর্মঘট: সুন্দর সমাধান কাম্য

সম্পাদকীয়

সোমবার থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম বড় খবর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ধর্মঘট। নেতিবাচক কিছুতে সংবাদের শিরোনাম হওয়া এমনিতেই যেকোনো দেশের জন্য বিব্রতকর। ক্রিকেটারদের ১১ দফার প্রায় সবকটিই দেশের ক্রিকেটের যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে, তা ক্রিকেট বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তির খুব উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন নয়।আজ তাদের দাবিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নারী ক্রিকেটেও একই সংস্কার এবং ক্রিকেটের আয়ের একটা অংশ প্রদান সংক্রান্ত দফা। ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে যাওয়ার ফলে অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে আসন্ন ভারত সফর। আমরা মনে করি, তাদের প্রতিটি দফাই যৌক্তিক এবং বিসিবির পূরণ করা উচিত।

যদিও ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোতে ধর্মঘট খুব বিরল কিছু নয়। তবে বাংলাদেশে টেস্ট জমানায় ধর্মঘট এটিই প্রথম। বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহে এমন একটি বিস্ফোরণ একরকম অবধারিত ছিল। ক্রিকেটারদের দাবিগুলোর প্রায় সবই মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশে এসব প্রাথমিকভাবেই থাকা উচিত। অথচ টেস্টের জগতে ১৯ বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরও এসবের জন্য ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ডাকতে হয়। ক্রিকেট জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য যথেষ্ট লজ্জাজনকই‌ বটে। আমরা মনে করি, বিসিবি কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না। ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নিষ্ক্রিয়তা, দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা এবং দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটাররা নানাভাবে বঞ্চিত থাকার প্রতিফলনই হচ্ছে এই ধর্মঘট।

universel cardiac hospital

ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সহ-সভাপতি দুইজনই বোর্ডের পরিচালক, ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কিছুর নজির নিশ্চিতভাবেই নেই। দুটি দায়িত্ব সরাসরি সাংঘর্ষিক। ক্রিকেটারদের দাবি দাওয়া নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে দেন দরবার করবে ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন। অথচ সেই সংগঠনের প্রধান ব্যক্তিরাই বোর্ডের বড় বড় দায়িত্বে। এসব কারণেই ১১ দফা দাবির প্রথম দফাতেই ক্রিকেটাররা বলেছেন ক্রিকেটারদের সংগঠন ক্রিকেটারদের পক্ষে কাজ করছে না। ক্রিকেটারদের চাওয়া, তারা নিজেরা ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। আমরা মনে করি এটি তাদের ন্যায্য অধিকার।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যুগ যুগ ধরে ক্রিকেটারদের দল বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল। আর্থিক চাহিদা আর নিজের পছন্দ মিলিয়ে তারা ঠিক করতেন নিজেদের ঠিকানা। অথচ তাদের সেই অধিকার খর্ব করে ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’ নামের উদ্ভট এক পদ্ধতি চালু করেছে বিসিবি, যেখানে তারাই পারিশ্রমিক বেঁধে দেয়। ক্রিকেটারদের নিজেদের ইচ্ছায় ক্লাব বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাও নেই। তাছাড়া বিপিএলের গত আসরের ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন নিয়ে সমঝোতায় আসতে না পারায় হুট করেই বিসিবি ঘোষণা করে বসল- তারা বিশেষ বিপিএল আয়োজন করবে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীকে সামনে রেখে এবার হবে ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’ সবগুলি দলই থাকবে বিসিবির ব্যবস্থাপনায়। মূলত বোর্ডের ব্যর্থতাকে আড়াল করার প্রয়াস থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ক্রীড়াঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে।

এই বোর্ডের মেয়াদে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ক্রিকেটের নিচের স্তরগুলো, যেখান থেকে ক্রিকেটাররা উঠে আসেন। প্রভাবশালী বোর্ড পরিচালকদের ক্লাবগুলোকে বাড়তি সুবিধা দিতে আম্পায়ারদের সাহায্যে অন্য ক্লাবকে হারানো, জোর-জবরদস্তি করাসহ টুর্নামেন্টগুলোকে বরাবরই নিজেদের বলয়ে রাখা হয়। যে টুর্নামেন্ট দিয়ে দেশের ক্রিকেটের মূল স্রোতে ক্রিকেটারদের হাঁটা শুরু হয়, সেই তৃতীয় বিভাগ বাছাই টুর্নামেন্টকে প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে নিজেদের স্বার্থে।

বিসিবি সভাপতির গতকালের সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটারদের পারিবারিক বিষয়গুলো টেনে আনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে চলমান সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেট খেলোয়াড়রা দেশের ক্রিকেটকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে